ত্বকে দেখা দিচ্ছে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ইঙ্গিত? অবহেলা করলে হতে পারে মারাত্মক বিপদ!
অগ্ন্যাশয়ের রোগ, বিশেষ করে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার, সাধারণত হজমে সমস্যা, পেটব্যথা ও অযাচিত ওজন কমার মতো উপসর্গের জন্য পরিচিত। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই রোগ শরীরে দৃশ্যমান কিছু ত্বকজনিত পরিবর্তনের মাধ্যমেও সতর্ক সংকেত দিতে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনগুলো অন্য উপসর্গের আগেই দেখা দেয়, যা রোগ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সময়মতো এসব লক্ষণ চিহ্নিত করতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয় এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ বাড়ে। জন্ডিস, অস্বাভাবিক চুলকানি, অদ্ভুত ধরনের র্যাশ, ত্বকের গুটি বা রঙের পরিবর্তন সবই অগ্ন্যাশয়ের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তাই রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের জন্য এসব লক্ষণ বোঝা জরুরি, যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার ও ত্বকের সম্পর্কিত লক্ষণ
অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার তখনই ঘটে যখন অগ্ন্যাশয়ের কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে টিউমার তৈরি করে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। হজম, এনজাইম উৎপাদন ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে অগ্ন্যাশয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সমস্যা হলো, এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলো বেশিরভাগ সময় দেরিতে প্রকাশ পায় অথবা সাধারণ হজমজনিত সমস্যার সঙ্গে মিলে যায়। তাই ত্বকের পরিবর্তন, দীর্ঘস্থায়ী জন্ডিস বা অকারণ চুলকানি প্রাথমিক সতর্কবার্তা হতে পারে।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের সম্ভাব্য ত্বকজনিত উপসর্গ
জন্ডিস ও চুলকানি
ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া জন্ডিসের লক্ষণ, যা অনেক সময় গাঢ় প্রস্রাব ও ফ্যাকাশে মলের সঙ্গে দেখা দেয়। অগ্ন্যাশয়ে টিউমার পিত্তনালী আটকে দিলে রক্তে বিলিরুবিন জমে এই সমস্যা দেখা দেয়। এর সঙ্গে তীব্র চুলকানি যোগ হয়, যা ত্বকে পিত্তলবণ জমার কারণে হয়ে থাকে। গবেষণা বলছে, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হলো জন্ডিস।
প্যানক্রিয়াটিক প্যানিকুলাইটিস
এটি একটি বিরল সমস্যা, যেখানে ত্বকের নিচে লালচে ও বেদনাদায়ক গুটি তৈরি হয়, সাধারণত পায়ে। এটি রক্তে অগ্ন্যাশয় এনজাইম বেড়ে যাওয়ার কারণে হয় এবং ক্যান্সার বা তীব্র অগ্ন্যাশয় প্রদাহের ইঙ্গিত দিতে পারে।
নেক্রোলাইটিক মাইগ্রেটরি এরিথেমা (NME)
এই বিশেষ ধরনের র্যাশ লাল, ফোসকাযুক্ত ও অনিয়মিত আকৃতির হয়ে থাকে, যা হাত-পা, কুঁচকি বা যৌনাঙ্গ এলাকায় দেখা যায়। সাধারণত গ্লুকাগন নিঃসরণকারী অগ্ন্যাশয়ের টিউমারের কারণে এটি হয়। এটি চুলকানি, ব্যথা ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
অ্যাকান্থোসিস নিগ্রিকানস
ত্বক মোটা হয়ে কালচে ও মসৃণ হয়ে যায়, বিশেষ করে বগল, ঘাড় ও কুঁচকির মতো ভাঁজযুক্ত স্থানে। যদিও এটি সাধারণত স্থূলতা বা ইনসুলিন প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও এটি সতর্ক সংকেত হতে পারে।
ত্বকে মেটাস্টেসিস
বিরল হলেও অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে ত্বকে গুটি বা শক্ত প্লাক তৈরি করতে পারে। সাধারণত উন্নত পর্যায়ের ক্যান্সারে এমনটা দেখা যায়, যা রোগের জটিলতা বাড়ায়।
লিভেডো রেটিকুলারিস
ত্বকে জালের মতো বেগুনি দাগ পড়া এ সমস্যার বৈশিষ্ট্য। এটি রক্তনালীর জটিলতা বা প্রদাহের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে এবং অগ্ন্যাশয়ের রোগের একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা যায়।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার নিঃশব্দ ঘাতকের মতো ধীরে ধীরে শরীরকে আক্রমণ করে, যেখানে ত্বকের পরিবর্তন অনেক সময় প্রাথমিক সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে। তাই এসব লক্ষণকে হালকাভাবে না নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু করা গেলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব এবং রোগীর জীবনমান উন্নত হতে পারে।