"মায়ের এক ধার দুধের দাম
কাটিয়া গায়েরও চাম
পাপুস বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না
এমন দরদী ভবে কেউ হবে না
আমার মা গো.........।"

এই গানটার সাথে পরিচিত নন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমিও খুব পছন্দ করি গানটা। মাঝে মাঝে আমার ছানাটাকে গেয়ে শুনাই। তবে বাবা হবার আগে এই গানের কথাগুলো অতটা ফিল করতে পারি নি। এখন বুঝতে পারি। এক ধার দুধের জন্য কেন গায়ের চামড়া দিয়ে পাপুস বানানোর উপমা আনা হয়েছে। আগে মনে হতো বাচ্চারা মায়ের দুধ খাবে এটাইতো স্বাভাবিক। এতে কষ্ট কেন হবে! কিন্তু বাবা হবার পর দেখেছি ছানাকে দুধ পান করাতে করাতে একজন মায়ের চোখে জল গড়িয়ে পরার দৃশ্য। সন্তান প্রসবের যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বাচ্চাকে মুখে তুলে খাওয়ানো আরেকটা যুদ্ধের মতো কাজ। তবুও মায়েরা দমে যান না। এত কষ্ট সহ্য করে যে মায়েরা সন্তান জন্ম দেয়, দুধ পান করায় কেন যে তাদেরকে দূর্বল বলা হয়, কেন যে অবলা বলা হয় আমার বুঝেই আসে না।

বাবা না হলে মায়েদের কষ্টগুলো নিজ চোখে দেখা হয়ে উঠতো না। সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে মায়েদের যে অসহনীয় কষ্টগুলোকে মেনে নিতে হয় তাও অজানাই থেকে যেত। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটানোর যন্ত্রণা যে ভোগ করেনি তাকে কি করে বুঝাবেন বলুন? প্রিয়ার পিঠে হেলান দিয়ে নির্ঘুম রাত কাটানো আর সন্তান গর্ভে নিয়ে রাত কাটানোর মাঝে আকাশ-জমিন পার্থক্য। এ সময়টাতে পূর্ণিমার চাঁদকেও মনে ধরে না। অথচ এই রমণীই কিন্তু নির্জনে হাতে হাত রেখে চাঁদনি রাতকে উপভোগ্য করে তুলেছে। জীবনে যদি একদিনও বমি করে থাকেন তাহলে বুঝবেন যে বমি হবার সময়টাতে কিংবা তার পর কেমন যন্ত্রনা হয়। অথচ মায়েদেরকে এই যন্ত্রনাই সহ্য করতে হয়েছে বহু বার। কন্ঠনালী জ্বলে-পুড়ে যায়, তবুও বলা যায় না কাউকেই।

সন্তান জন্ম দিয়েই কি শেষ হলো কষ্টের দিন? না রে ভাই। সবে তো শুরু। যে মেয়েটা এক ঘুমে রাত পার করতো তাকেই ঘন্টায় ঘন্টায় জাগতে হয় সন্তানকে শান্ত করতে। যখন মায়ের ঘুমানোর সময় হয় তখন বাচ্চাকে শত চেষ্টা করেও ঘুম পাড়ানো যায় না। আবার যখন ছানাটা ঘুমায় তখন হয়তো ঘুমগুলো নিরুদ্দেশ হয় মায়ের চোখ থেকে।

মায়েদের এমন কঠিন মুহুর্তে বাবারা পাশে না থাকলে কে থাকবে বলুন। এই সময়টাতে মায়েদের খিটখিটে মেজাজ সহ্য করতে না পারলে আপনার ভালোবাসা পাবার কোন যোগ্যতাই নেই। আপনি বাবা হওয়ার মতো পরিপক্ব এখনো হয়ে উঠতে পারেন নি। আপনার ভরসার হাত, ভালোবাসা পূর্ণ কথা আর পাশে থেকে সাহস জোগানোর এই সময়গুলোই মনে থাকবে।