কার্জন হল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ভবন, যা পুরাকীর্তি হিসেবে স্বীকৃত। এটি নির্মাণ করা হয় ঢাকা কলেজের ব্যবহারের জন্য। বর্তমানে, এটি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান অণুষদের কিছু শ্রেনীকক্ষ ও পরীক্ষার হল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি ১৯, ১৯০৪ সালে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল - লর্ড কার্জন এটির ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন করেন। বঙ্গভঙ্গ ঘোষিত হওয়ার পর প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলার জন্য রমনা এলাকার যেসব ইমারতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় কার্জন হল তার মধ্যে অন্যতম। দানী লিখেছেন, 'কার্জন হল নির্মিত হয়েছিল টাউন হল হিসেবে'। কিন্তু শরীফউদ্দীন আহমদ এক প্রবন্ধে দেখিয়েছেন এ ধারণাটি ভুল। এটি নির্মিত হয় ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসেবে। এবং নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন ভাওয়ালের রাজকুমার। ১৯০৪ সালের ঢাকা প্রকাশ লিখেছিল_ "ঢাকা কলেজ নিমতলীতে স্থানান্তরিত হইবে। এই কলেজের সংশ্রবে একটি পাঠাগার নির্মাণের জন্য সুযোগ্য প্রিন্সিপাল ডাক্তার রায় মহাশয় যত্নবান ছিলেন। বড়লাট বাহাদুরের আগমন উপলক্ষে ভাওয়ালের রাজকুমারগণ এ অঞ্চলে লর্ড কার্জন বাহাদুরের নাম চিরস্মরণীয় করিবার নিমিত্তে 'কার্জন হল' নামে একটি সাধারণ পাঠাগার নির্মাণের জন্য দেড় লক্ষ টাকা দান করিয়াছেন।" ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে, ঢাকা কলেজের ক্লাস নেয়া হতে থাকে কার্জন হলে।[৩] পরবর্তী সময়ে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে কার্জন হল অন্তর্ভুক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের জন্য, যা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৯০৪ সালে ভারতের ভাইসরয় লর্ড জর্জ নাথানিয়েল কার্জন এই হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং তারই নামানুসারে এ ভবনের নাম হয় কার্জন হল। এ ভবনটিতে সংযোজিত হয়েছে ইউরোপ ও মুগল স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ; আংশিকভাবে মুসলিম স্থাপত্যরীতিও অনুসরণ করা হয় এতে। ভবনের বহির্পৃষ্ঠে কালচে লাল রঙের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। আধুনিক স্থাপত্য বিদ্যা এবং মোগল কাঠামোর সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে এর খিলান ও গম্বুজগুলো।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সাথে কার্জন হল জড়িয়ে আছে। ১৯৪৮ সালে এখানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তদানীন্তন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এতদসংক্রান্ত জিন্নাহর ঘোষণার প্রতি প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ কার্জন হলে অনুষ্ঠিত বিশেষ সমাবর্তনে জিন্নাহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে বলে ঘোষণা করলে কার্জন হলে উপস্থিত ছাত্ররা তখনই ‘নো-নো’ বলে প্রতিবাদ করে।

image
This page has been loaded 14163 times.