রাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করতেই জেল হত্যা ॥ লিটন
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ইতিহাসের কলঙ্কিত জেল হত্যা দিবসে দেশের জাতীয় চার নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে রাজশাহী সিটি মেয়র ও শহীদ এএইচএম কামারারুজ্জামানের পুত্র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন রাষ্ট্রিয় কাঠামো ধ্বংস করতেই কারাভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বুধবার জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ৩ নবেম্বর বাঙালী জাতির গভীর বেদনার দিন। জাতি দিনটিকে জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালনের মাধ্যমে জাতীয় চার নেতাকে গভীরভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নবেম্বর তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয় চার নেতা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রধান ভূমিকায় থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী জাতীয় শত্রু ও ঘাতকরা রক্তে অর্জিত বাঙালির রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংসের হীন উদ্দেশ্যেই দেশপ্রেমিকদের হত্যা করেছিল। কিন্তু দেশের মানুষ সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। দেশবাসীর সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুধা, দারিদ্র্য মুক্ত, তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
জেলহত্যা দিবস সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সন্তান রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রত্যেক সন্তানের কাছেই তার মা-বাবা অত্যন্ত আবেগের জায়গা। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি বা হওয়ার কথাও না। সেই ক্ষেত্রে এই দিনটিকে ঘিরে অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে। বাবা হারানোর যে বেদনা তরুণ বয়সে পেয়েছি, তখন যেমন ছিল এখন তেমনই আছে। এ ব্যথা তো থাকবেই।
জাতীয় চারনেতার অন্যতম এএইচএম কামারুজ্জামানের সন্তান খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আজকের এই দিন আসলে মনে হয়, জাতির জন্য বড় ক্ষতিটা হয়ে গেছে। যেটা ১৯৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত ২১ বছর। এই ক্ষতি সহসা পূরণ হওয়ার নয়। এই ক্ষতি যারা করেছেন তারা জাতির জীবন থেকে ২১টি বছর দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। এটি তো অফেরতযোগ্য। এ কারণে জাতি চিরকাল এই খুনিদের মীর জাফর হিসেবে চিহ্নিত করবে, ঘৃণা করবে এবং এই দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করবে।
তিনি বলেন, এমনিতে অনেক দেরি হয়েছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচার করতে গিয়ে একটি হত্যাকাণ্ডের যেমন সময় লাগে বরং তার চেয়ে বেশি সময় লেগেছে। ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় আসলো। তারা জেলহত্যা মামলার রায় ২০০৪ সালে দিল। সেটি একটি প্রহসনের রায়। যারা প্রকৃত খুনি তাদের নামমাত্র শাস্তি দেওয়া হলো বা বেকসুর খালাস দেওয়া হলো। আমরা সেই রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছি।
লিটন আরও বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচারকার্য শেষ হয়ে এখন যে পর্যায়ে আছে তাতে রায় বাস্তবায়নের কাজটি বাকি। বাস্তবায়নের জন্য আমরা অধীর আগ্রহে আছি। কারণ আমাদের সবারই বয়স হয়েছে। আমাদের মায়েরাও গত হয়েছে। তারা আংশিক দেখে যেতে পেরেছেন। আমরা মনে করি এই কলঙ্ক বাঙালি জাতির ললাট থেকে চিরতরে মুছে ফেলার জন্যে যা করা দরকার, আমাদের সরকার তা করবে এবং করছে।
মেয়র লিটন বলেন, জাতীয় শত্রুদের বিরুদ্ধে সচেতন ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জনাচ্ছি।