নিখিলেশ প্যারিস থেকে ঢাকা ফিরেছে গত রাত। মঈদুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্যারিস থেকে নিখিলেশ খবর পেয়েছিল ঢাকার একটা পুরোনো জীর্ণ শ্যাওলা ধরা বাড়ির দোতলায় থাকে মঈদুল।

অনেক কষ্টে দোতলা বাড়িটা খুঁজে পেলেও বাড়িটা মুখ পাওয়া গেলো তালাবদ্ধ অবস্থায়। বাড়ির সামনের কড়ই গাছের নিচে বসা চায়ের দোকানি বললো, সন্ধ্যায় সে বাড়ি ফিরবে। নিখিলেশ চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে অপেক্ষা করতে থাকে।

বেঞ্চিতে বসে দেখতে পায়, একটা বড় খয়েরী রঙের চার চাকা সামনে দিয়ে ছুঁটে যাচ্ছে। গাড়িটা দেখে সুজাতার কথা মনে পরে। সুজাতা কি আসলেই সুখে আছে? তার স্বামী তাকে সত্যিই সুখী করতে পেরেছে? হিরা আর জহরতের মধ্যেই কি সব সুখ আছে?

আচ্ছা আচ্ছা? অমলটা কেমন আছে? অমলের কোনো কবিতা কি কোথাও ছাঁপা হয়েছিল? নিখিলেশ অনেকবার ভেবেছিল, যেদিন তার অনেক টাকা পয়সা হবে সেদিন নিজ খরচে একটা দৈনিক পত্রিকা বের করবে। সেখানে সবার প্রথমে ছাঁপা থাকবে অমলের কবিতা গুলো। মানুষ তখন অমলকে চিনবে। অমলের অনেক নাম ডাক হবে।

মঈদুল বাড়ি ফিরলো দুপুরে। পুরোনো বন্ধুকে ফের সামনাসামনি দেখতে পেয়ে দুজনেরই চোঁখেই অশ্রু দেখা যায়। কেউ তা প্রকাশ করেনা, তাদের দুজনেরই বয়স হয়েছে।

তুই কি এখনো কাগজের রিপোর্টার হিসেবে কাজ করিস?

মঈদুল বললো, না। চাকরিটা আর নেই।

নিখিলেশ বললো, চল আজ একটু পাগলা গারদে যাই, রমাকে দেখা আসি।

মঈদুল বললো, রমা? কোন রমা?

নিখিলেশ বললো, আরে রমা রায়, আমাদের রমা রায়। অফিসের সোশ্যালে অ্যামেচার নাটকে যে মেয়েটা অভিনয় করতো? আমাদের বান্ধবী। ভুলে গেসিছ? তুই তো দেখি সব ভুলে গেসিছ ব্যাটা।

মঈদুল কিছু বলে না। চুপ করে পায়ের বুড়া আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে আসলে রমাকে ভোলেনি। রমাকে ভুলে যাওয়া এত সহজ নয়। মঈদুল কষ্টের কথা কখনো মনে রাখেনা। সে শুধু ভালোটাই মনে রাখে।

মঈদুল বললো, ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়েসিছ?

নিখিলেশ বললো, হ্যাঁ।

কেনো?

জানিনা।

গোয়ানিজ ডিসুজার কবরটা কোথায় জানিস? আমিও প্যারিসে চলে গেলাম আর ডিসুজাও মারা গেলো। আমি শেষ দেখাটাও দেখতে পেলাম না।

ওই যে আমাকে শেষবার গলির মাথায় সিগারেট টানতে টানতে এগিয়ে দিতে এসেছিল। আর কখনো দেখা হয়নি আমাদের। আর হলোও না কখনো।

মঈদুল বললো, কোলকাতায়।

সুজাতার কোনো খবর জানিস?

হ্যাঁ, দুটো মেয়ে হয়েছে। তবে স্বামী আর আগের মতো ভালোবাসে না।

নিখিলশে বললো, কোলকাতা যাবি?

আমার কাছে গোয়ানিজ এর একটা সলো গিটারের সিডি আছে। নিয়ে যা, শুনতে পারিস।

এখনো আগলে রেখেসিছ?

হ্যাঁ।