সম্পর্ক কথা (প্রথম কিস্তি)


মহান স্রষ্টার এক অনুপম সৃষ্টি ‘সম্পর্ক’। একজন মানুষ আরেকজন বা বিভিন্ন জনের সাথে মিশে থাকে কেবল এই সম্পর্কের টানে। এই সৃষ্টি জগতের সবকিছুই একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই নিবির সম্পর্কের যে কোন এক জায়গায় সামান্য চির ধরলেও এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড মুহূর্তে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। এটা বিজ্ঞান স্বীকৃত। ঠিক একই ভাবে এই মানব সভ্যতা গড়ে ওঠা, বিকশিত হওয়া এবং টিকে থাকা সবটাই এই সম্পর্ক নির্ভর।
আজকের পৃথিবীতে যে অসহিষ্ণুতা, যে অস্থিরতা আমরা দেখতে পাই তাঁর পেছনেও রয়েছে সম্পর্কের টানা পোড়েন। একইভাবে পারিবারিক অস্থিরতা, সামাজিক অবক্ষয়, হিংসা, মারামারি, খুন সব কিছুর পিছনে একটাই প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। আর তা এই সম্পর্কের অবনতি বা সম্পর্ক হীনতা।

সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বোঝা প্রয়োজন সম্পর্ক কি? সম্পর্ক একটিমাত্র শব্দ হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক। অনেকগুলি ইতিবাচক দিক একত্রীত হলেই এই শব্দটি পূর্ণতা পায়। দায়িত্ববোধ, মমত্ব, আন্তরিকতা, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা বোধ এই সব উপাদানের সাথে যখন কর্তৃত্ব যোগ হয় তখনই একটি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। সম্পর্ক সৃষ্টির সকল উপাদানের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল এই সমান কর্তৃত্ব উপাদানটি। যখন দুজন বা ততোধিক ব্যক্তির নিজেদের মধ্যে সমান কর্তৃত্বের অধিকারী হয় তখন তাদের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং সুস্থ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

সমান কর্তৃত্ব হল সেটাই, যেখানে দুজন দুজনকে সমানভাবে শাসনের অধিকার রাখে। এটা মা-সন্তানের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। হতে পারে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে উভয়ের শারীরিক এবং মৌখিক ভাষা ভিন্ন হবে কিন্তু উদ্দেশ্য একই থাকবে এবং একই সাথে উভয়কেই সন্তুষ্ট চিত্তে এই কর্তৃত্ব মেনে নিতে হবে। তখনই কেবল আমরা একে একটি সুস্থ সম্পর্ক বলতে পারব।
যেমন ধরুন, মা তাঁর ছেলেকে আদেশ দিলেন নির্দিষ্ট একটি মেয়েকে বিয়ে করতে। এটা তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের উদাহরণ। কিন্তু ছেলে সেই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে না তখন সে তাঁর কর্তৃত্ব কি করে প্রয়োগ করবে? একটা সুস্থ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে তাঁর মা’কে বুঝিয়ে শুনিয়ে। অনুরোধ উপরোধের মাধ্যমে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবে অথবা মা তাকে বুঝিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে ছেলেকে রাজি করাবেন। যেখানে দুজনই জিতে যাবে। আর তা না করে যদি যে কোন একজন নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের উপর চাপিয়ে দেন তাহলে বুঝতে হবে তাদের মাঝে সুস্থ সম্পর্ক নেই। যা সম্পর্ক হীনতারই নামান্তর মাত্র।

একটু লক্ষ করে দেখুন, পৃথিবীর সবথেকে মজবুত সম্পর্ক থেকে শুরু করে সব থেকে ঠুনকো, কোনটাই মানুষের স্থাপিত নয়। সবটাই মহান স্রষ্টা প্রদত্ত। যেমন মা-সন্তানের সম্পর্ক থেকে শুরু করে সাধারণ বন্ধুত্ব। সম্পর্কগুলো চাইলেই যে কেউ স্থাপন করতে পারে না। হয়ে যায়। কখন কিভাবে, কার সাথে কার পূর্বে তা জানার কোন উপায় নেই। অথচ এই সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার বা টানা পোড়েনের দায় পুরোটাই সম্পর্কযুক্ত মানুষের।

মানুষের দায়িত্ব হল মহান আল্লাহ্‌ প্রদত্ত অসংখ্য নিয়ামতের মত এই নিয়ামতটিরও পরিচর্যা করা। যত্ন নেয়া। আমরা শরীরের যত্ন নেই। কারণ জানি যত্ন না নিলে শরীর অসুস্থ হবে। আমরা সম্পদের যত্ন নেই। কারণ জানি, যত্ন না নিলে সম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা কি সম্পর্কের যত্ন নেই? নেই না। কারণ আমরা ভাবি সম্পর্ক স্থায়ী।
ফলে আমাদের সম্পর্কের সুতো গুলো ক্রমশ ছিঁড়ে যাচ্ছে। আমরা একলা হয়ে পড়ছি। ঘরে –বাইরে সর্বত্র। যার ফলে এক সময় অনেক যত্ন নেয়া স্বাস্থ্য-সম্পদ সব কিছুই হাড়িয়ে ফেলছি। সম্পর্ক যেমন একের উপর নির্ভর করে না তেমনি একের যত্নেও এটি সুস্থ থাকে না। সম্পর্কযুক্ত প্রত্যেককেই সমান যত্নে একে লালন করতে হয়। চলবে………………