লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু হযরত আদম শফিউল্লাহ।
সুরা: আর-রূম
আয়াত নং :-30
টিকা নং:42, 43, 44, 45, 46, 47,
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًاۚ فِطْرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِى فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيْهَاۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ ٱللَّهِۚ ذَٲلِكَ ٱلدِّينُ ٱلْقَيِّمُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ,
কাজেই৪২ (হে নবী এবং নবীর অনুসারীবৃন্দ) একনিষ্ঠ হয়ে নিজের চেহারা এ দ্বীনের৪৩ দিকে স্থির নিবদ্ধ করে দাও।৪৪ আল্লাহ মানুষকে যে প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করেছেন তার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও।৪৫ আল্লাহর তৈরি সৃষ্টি কাঠামো পরিবর্তন করা যেতে পারে না।৪৬ এটিই পুরোপুরি সঠিক ও যথার্থ দ্বীন। ৪৭ কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।
তাফসীর :
টিকা:৪২) এখানে “কাজেই” শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা হচ্ছে, সত্য যখন তোমাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে এবং তোমরা যখন জানতে পেরেছো এ বিশ্ব-জাহানের ও মানুষের স্রষ্টা, মালিক ও সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন শাসনকর্তা এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নয় তখন এরপর অপরিহার্য ভাবে তোমাদের কার্যধারা এ ধরনের হওয়া উচিত।
টিকা:৪৩) কুরআন “দ্বীন” শব্দটিকে যে বিশেষ অর্থে পেশ করছে “দ্বীন” শব্দটি এখানে সেই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে বন্দেগী, ইবাদাত ও আনুগত্য লাভের অধিকার একমাত্র লা-শরীক আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। এতে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব, গুণাবলী ক্ষমতা ও অধিকারে কাউকে তাঁর সাথে সামান্যতমও শরীক করা যায় না। এখানে মানুষ নিজের ইচ্ছা ও আগ্রহ সহকারে একথা মেনে নেয় যে, সে তার সমস্ত জীবনে আল্লাহর পথনির্দেশ এবং তাঁর আইন মেনে চলবে।
টিকা:৪৪) “একনিষ্ঠ হয়ে নিজের চেহারা এদিকে স্থির নিবদ্ধ করো” অর্থাৎ এরপর আবার অন্যদিকে ফিরো না। জীবনের জন্য এ পথটি গ্রহণ করে নেবার পর অন্য কোন পথের দিকে দৃষ্টি ও দেয়া যাবে না। তারপর তোমাদের চিন্তা-ভাবনা হবে মুসলমানের মতো এবং তোমাদের পছন্দ অপছন্দও হবে মুসলমানদের মতো। তোমাদের মূল্যবোধ ও মানদণ্ড হবে তাই যা ইসলাম তোমাদের দেয়। তোমাদের স্বভাব-চরিত্র এবং জীবন ও কার্যক্রমের ছাঁচ ইসলামের চাহিদা অনুযায়ী হবে। ইসলাম যে পথে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনধারা চালাবার বিধান দিয়েছে তোমাদের সে পথেই নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন পরিচালিত করতে হবে।
টিকা:৪৫) অর্থাৎ সমগ্র মানব জাতিকে এ প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এক আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কোন স্রষ্টা, রব, মাবুদ ও আনুগত্য গ্রহণকারী নেই। এ প্রকৃতির ওপর তোমাদের প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া উচিত। যদি স্বেচ্ছাচারীভাবে চলার নীতি অবলম্বন করো তাহলে প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করবে। আর যদি অন্যের বন্দেগীর শিকল নিজের গলায় পরে নাও তাহলেও নিজের প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করবে। এ বিষয়টি নবী ﷺ বহু হাদীসে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ
مَا مِنْ مَوْلُودٍ يُولَدُ إِلاَّ عَلَى الْفِطْرَةِ ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ ، كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ
“মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভকারী প্রত্যেকটি শিশু আসলে মানবিক প্রকৃতির ওপরই জন্ম লাভ করে। তারপর তার মা-বাপই তাকে পরবর্তীকালে ইহুদী, খৃস্টান ও অগ্নিপূজারী হিসেবে গড়ে তোলে।”
এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন প্রত্যেকটি পশুর পেট থেকে পুরোপুরি নিখুঁত ও সুস্থ পশুই বের হয়ে আসে। কোন একটা বাচ্চাও কান কাটা অবস্থায় বের হয়ে আসে না। পরে মুশরিকরা নিজেদের জাহিলী কুসংস্কারের কারণে তার কান কেটে দেয়।
মুসনাদে আহমাদ ও নাসায়ীতে আর একটি হাদীস আছে, তাতে বলা হয়েছেঃ এক যুদ্ধে মুসলমানরা শত্রুদের শিশু সন্তানদেরকেও হত্যা করে। নবী (সা.) এর কাছে এ খবর পৌঁছে যায়। তিনি ভীষণ অসন্তুষ্ট হন এবং বলেনঃ
مَا بَالُ أَقْوَامٍ جَاوَزَهُمُ الْقَتْلُ الْيَوْمَ حَتَّى قَتَلُوا الذُّرِّيَّةَ
“লোকদের কি হয়ে গেছে, আজ তারা সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং শিশুদেরকেও হত্যা করেছে? ”
একজন জিজ্ঞেস করলো, এরা কি মুশরিকদের সন্তান ছিল না। জবাবে তিনি বলেনঃ
إِنَّها خِيَارَكُمْ أَبْنَاءُ الْمُشْرِكِينَ
“তোমাদের সর্বোত্তম লোকেরা তো মুশরিকদেরই আওলাদ।” তারপর বলেনঃ
كُلُّ نَسَمَةٍ تُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ حَتَّى يُعْرِبَ عَنْهَ لِسَانُهَا فَأَبَوَاهَا يُهَوِّدَانِهَا اوَيُنَصِّرَانِهَا-
“প্রত্যেক প্রাণসত্ত্বা প্রকৃতির ওপর জন্ম নেয়, এমনকি যখন কথা বলতে শেখে তখন তার বাপ-মা তাকে ইহুদী খৃস্টানে পরিণত করে।”
অন্য একটি হাদীসে ইমাম আহমাদ (রা.) ঈযায ইবনে হিমার আল মুজাশি’য়ী থেকে উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, একদিন নবী ﷺ নিজের ভাষণের মাঝখানে বলেনঃ
ان ربى يقول إِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِيَ حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ، وَإِنَّهُم أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاضْلَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا-
“আমার রব বলেন, আমার সমস্ত বান্দাদেরকে আমি একনিষ্ঠ সত্যপথাশ্রয়ী করে সৃষ্টি করেছিলাম, তারপর শয়তানরা এসে তাদেরকে দ্বীন থেকে বিপথগামী করে এবং তাদের জন্য আমি যা কিছু হালাল করে দিয়েছিলাম সেগুলোকে হারাম করে নেয় এবং তাদেরকে হুকুম দেয়, আমার সাথে এ জিনিসগুলোকে শরীক গণ্য করো, যেগুলোকে শরীক করার জন্য আমি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করিনি।”