❏ বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৮, ২০২২ ☵
‘চলো আমার গ্রামে ঘুরতে যাই, মজা হত সাথে তোমার কেউ থাকলে’ কিংবা অতটা ভণিতা না করে কেউ সরাসরিই জিজ্ঞেস করেন, বিয়ে করছ কবে?
ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে হয়ত বলবে, ‘হাতের অবস্থা ভাল না আরেকটু গুছিয়ে নিই’ কিংবা ‘আরে বয়স তো এখনো আছে’ বলে পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে। কিন্তু আসলেই কোন বয়সে বিয়ে করা উচিত? জীবনের কোন পর্যায়ে থাকলে বিয়ে করার সময়টাকে সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়?
নিরপেক্ষ হয়ে ভাবুন তো, শুধু বয়স নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আরও কিছু ব্যাপার। যিনি বিয়ে করছেন, সেই ছেলে বা মেয়েটির শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি অথবা জীবনের এত বড় দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেকে উপযুক্ত ভাবছেন কি না? ক্যারিয়ারের কোন পর্যায়ে আছে। হতেও পারে ছেলেটি কোন অসম প্রেমে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ, যদিও এটি হলে পারিবারিক ইমোশনের প্যাড়ায় পিড়িত হবেন। যাইহোক, এমন অনেক বিষয় কাজ করে বিয়ের সিদ্ধান্তে। আবার এও ঠিক, এসব নিয়ে বেশি বেশি ভাবতে গিয়ে বা দুশ্চিন্তা করতে গিয়ে অনেকে সঠিক সময়ে বিয়েটাই করে উঠতে পারেন না। একটি নির্দিষ্ট বয়স নিশ্চয়ই আছে, যে বয়সটা সংসার গুছিয়ে আনার জন্য সবচেয়ে ভালো।
কেমন ছেলে বিয়ে করবেন?
বিয়ে তো জীবনে একবারই করবেন। কিন্তু সেই বিয়ে করে যদি জীবন বোরিং হয়ে যায়, তাহলে বিয়ে করে লাভটা কী? বিয়ে করার জন্য বেশিরভাগ মেয়েই খোঁজেন শান্ত শিষ্ট, ভালো মানুষ ধরণের ছেলে। কিন্তু ভালো মানুষ ছেলেদের সাথে কি বিবাহিত জীবন মজার হয়? একদম না। বরং জটিল আর অদ্ভুত ধরণের ছেলেদের সাথেই দাম্পত্য হয়ে ওঠে মজার ও ইন্টারেস্টিং। মানতে খটকা লাগছে?
আসুন, কেমন ছেলে বিয়ে করবেন?
১) আপনি যা চান, সেটা সাথে সাথে আপনাকে দিয়ে দেবেন না এমন ছেলেকে বিয়ে করুন। চাওয়া মাত্র সব পেয়ে গেলে জীবন কিন্তু মারাত্মক বোরিং হয়ে উঠবে।
২) বিয়ে করুন সেই পুরুষকে যাকে আপনি বুঝতে পারেন না। যখনই মনে হবে বুঝে ফেলেছেন, তখনই আবার নতুন করে চিনতে হবে।
৩) বিয়ে করুন সেই পুরুষকে, যিনি আপনাকে জীবন দেখাতে পারেন একদম ভিন্নভাবে। পৃথিবীর প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারেন যে পুরুষ, তিনি হবেন মজার জীবনসঙ্গী।
৪) যে পুরুষের আগ্রহের ব্যাপারগুলো আপনারও আগ্রহ জায়গায়
৫) যিনি আপনার দেখা সমস্ত পুরুষ হতে ভিন্ন, সে পাশে থাকলে কথা না বললেও নিশ্চিন্ত লাগে।
বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে পাঁচ প্রকারের পুরুষদের বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও এই পাঁচ বৈশিষ্ট্য গুলির একে-অপরের সঙ্গে কোনও সাদৃশ্য নেই। সেই পাঁচ প্রকার পুরুষ হল-
১. দাম্পত্য জীবনের সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় এক শ্রেণীর পুরুষ। খুব সরল মাটির মানুষ হলেই এই ধরণের ছেলেদের সঙ্গে সংসার করা অসম্ভব। আধুনিক বা প্রগতিশীল নারীদের এদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
২. মায়ের আঁচলের তলায় থাকা ছেলেদের মধ্যে পুরুষ সুলভ ব্যক্তিত্ব থাকে না। অনেক সময় মায়ের অন্যায় আচরণ সহ্য করে স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ করে। এই প্রকার ছেলেদের ক্ষেত্রে আবার উলটোটাও করার প্রবণতা থাকে। বিয়ের পর মা-এর সঙ্গে বিরোধ করে স্ত্রীর প্রতি অতিমাত্রায় দুর্বল হয়ে যায়। এটাও সুস্থ সংসারে কাম্য নয়।
৩. আমি সব জানি, আমি সব বুঝি। সব বিষয়ে আমার সমান দক্ষতা। এই মানসিকতার ছেলেরা নিজেদের মতামতকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অন্যের মতের কোনও গুরুত্বই থাকে না এদের। এই ধরণের ছেলেরা স্বামী হিসেবে সুখকর হয় না।
৪. অতিরিক্ত আত্মকেন্দ্রিক ছেলেরা স্বামী হিসেবে খুব খারাপ হয়। তাদের মধ্যে সব সময় নিজেকে সকলের কাছে জাহির করার প্রবণতা থাকে। যার ফলে স্বামী হিসেবে নিজের গুণাগুণ সর্বত্র ফলাও করে প্রচার করতে থাকে। যা একসময় প্রবল বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৫. শেষের কারণটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বহুল প্রচলিত একটা কথা রয়েছে যে খারাপ ছেলেদের প্রতি মেয়েদের আকর্ষণ বেশি থাকে। কথাটির মধ্যে বিন্দুমাত্র ভুল নেই। নানা গবেষণায় এই প্রবাদটির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। মেয়েদের ধারণা থাকে যে পরে ছেলেটির পরিবর্তন হবে। নিজগুণে পুরুষ সঙ্গীর মধ্যে বদল আনবেন বলেও মনে করেন অনেক মহিলা। কিন্তু, এই ভাবনা মহিলাদের বিরাট ভুল। যার খেসারত দিতে হয় দাম্পত্য জীবনে। এই প্রকারের ছেলেরা কখনোই ভালো হয় না।
আবার কয়েকজন বান্ধবীদের স্বীকারোক্তি এমন, যে ছেলেটার সাথে কথা বলে বা তার সাথে কিছুদিন মিশে আপনার মনে হচ্ছে- এই ছেলেটা খুব। আশে পাশের অনেকেই তাকে খুব ভালো বলেছে- কিন্তু বিশ্বাস করুন- এই ছেলেটিও ভিড়ের মধ্যে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়। রাত জেগে পর্ণ ভিডিও দেখে। রাস্তায় চলাফেরা করার সময় মেয়েদের বুকের দিকে কুৎসিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বেকার কোনো ছেলেকে বিয়ে করবেন না। ভুল করার আগে সিদ্ধান্ত নিতে আপনি সচেতন হন। নারীরা সাবধান থাকুন। বিয়ের সময় আবেগকে প্রাধান্য দিবেন না।
এছাড়া যদি ধার্মিক নীতিতে বিবেচনা করেন তবে বিয়ের জন্য বরের অন্যতম যোগ্যতা হচ্ছে- ‘দ্বীনদারি ও চারিত্রিক পবিত্রতা’। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে যদি এমন পাত্র বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে- যার দ্বীনদারি ও চরিত্র তোমাদের কাছে পছন্দনীয়; তবে তার সঙ্গে তোমাদের কন্যাদের বিয়ে দিয়ে দাও। যদি তোমরা এরূপ না কর (দ্বীনদার ও চরিত্রবান পাত্রকে ফিরিয়ে দাও এবং তাদের সঙ্গে কনের বিয়ে না দাও) তবে এর কারণে জমিনে অনেক বড় ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে।’ (তিরমিজি)
এ হাদিসে বরের দুটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হলো- দ্বীনদারি আর অন্যটি হলো চারিত্রিক পবিত্রতা। সুতরাং বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রের অন্যতম গুণও এ দুটি।
বিয়ের সময় বরের যে জিনিসগুলো দেখা আবশ্যক, তাহলো-
- ধর্ম তথা দ্বীনদারি: ধর্মহীন কোনো অমুসলিম কিংবা কাফেরের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়া যাবে না। আবার নেককার কন্যাকে ফাসেকের সঙ্গেও বিয়ে না দেয়া।
- স্বাধীন: কোনো স্বাধীন কন্যাকে পরাধীন তথা ক্রিতদাসের কাছে বিয়ে না দেয়া।
- বংশ মর্যাদা: ভালো কাজের জন্য সুনাম আছে এমন বংশের বরের কাছে কনের বিয়ে দেয়া। নিচু বংশের কারো সঙ্গে কনের বিয়ে না দেয়া।
- পেশা: আর যদি কনের পরিবার ভালো ও উচ্চ বংশের হয় তবে নিচু বংশের (নাপিত, ধোপা ও মুচির সম পর্যায়ের) কারো সঙ্গে বিয়ে না দেয়া।
ভাবছেন সব মিলে গেল, সব কিছু ঠিকঠাক থাকে তবে এখনই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাবেন না। কেন?
বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর কয়েকটি মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো অতি আবশ্যক। আজকালকার আধুনিক ছেলেমেয়েরা কিন্তু এর গুরুত্ব বোঝে। বিয়ের আগে কী কী মেডিক্যাল টেস্ট করানো উচিত জেনে নেওয়া যাক –
যৌনসংক্রমণ আছে কি না: অর্থাৎ সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজ়িজ় (STD) । এখনকার ছেলেমেয়েরা সেক্সের ব্যাপারে অনেকটাই এগিয়ে। বিয়ের আগেই অনেক রকম অভিজ্ঞতা হয় তাদের। শুধু তাই নয়। অধিকাংশেরই একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে লিপ্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। ফলে কার শরীরে কোনও সংক্রমণ আছে, কেউ তা যাচাই করে দেখে না। এদিকে যথাযথ সময় বিয়েটাও করে নেয়। ফলত পাত্র/পাত্রী HIV, গনোরিয়া, সিফিলিসের মতো যৌনরোগে আক্রান্ত কি না বলা কঠিন। তাছাড়া, কেউ এই নিয়ে মুখ খোলে না। একমাত্র মেডিক্যাল টেস্ট করালেই গোপন সংক্রমণ ধরা পড়তে পারে। শুক্রাণু পরীক্ষা: বিয়ের পর সব দম্পতিই সন্তান নিতে চান। কিন্তু অনেকসময় সন্তান ধারণে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় স্বামী-স্ত্রীকে। এর কারণ হতে পারে স্বামী-স্ত্রী দু-জনেই। স্ত্রীর শরীর অনেকসময় সন্তান ধারণের উপযুক্ত পরিস্থিতিতে থাকে না বলে সন্তান আসে না। কিন্তু সেটা আগে থেকে জানা যায় না। তবে পুরুষের অক্ষমতা কিন্তু মালুম হয় শুক্রাণু পরীক্ষা করালেই। ব্লাড গ্রুপ: পাত্র/পাত্রীর ব্লাড গ্রুপ জানাও খুব জরুরি। কারণ নেগেটিভ ও পজ়িটিভ ব্লাড গ্রুপের নারীপুরুষের বিয়ে হলে পরবর্তীকালে সন্তান ধারণে ঘটতে পারে বিপত্তি। তবে এই শঙ্কাটি দেখা দেয় দ্বিতীয় সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে। অনেকসময় গর্ভেই সন্তান মারা যায়। কিংবা জন্মের পর তার মারাত্মকরকম জন্ডিস হয়। মস্তিষ্কও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় এটি রোধ করার পদ্ধতি আছে। সন্তান জন্মানোর সময় মায়ের শরীরে অ্যান্টিবডি ইঞ্জেকশন দিলে ক্ষতির সম্ভাবনা কমতে পারে। মানসিকরোগ পরীক্ষা: সাধারণ মেডিক্যাল পরীক্ষায় সাইকোলজিক্যাল সমস্যা ধরা পড়ে না। কিন্তু সত্যি বলতে কী, কোনও ব্যক্তিকে বিয়ে করার আগে সে স্বাভাবিক কি না জানা খুব দরকার। অর্থাৎ, দেখা দরকার তার কোনও মানসিক সমস্যা আছে কি না। এটি খতিয়ে দেখার জন্য পাত্র/পাত্রীর আচার ব্যবহার লক্ষ্য করতে হবে। পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব ও অফিসের লোকজনের থেকে খোঁজখবর নিতে হবে। বিয়ের সময় পাত্র/পাত্রীর বাড়ির লোক তাঁদের ছেলেমেয়ে সম্পর্কে কোনও খারাপ কথা বলে না। কিন্তু বিয়ের পর ধরা পড়ে আসল রূপ। সুতরাং, পাত্র/পাত্রীর মানসিক সমস্যা আছে কি না সেটা দেখা খুব জরুরি। বিয়ে কোনো কমপিটিশন না। বিয়ে কম্পেনিয়নশিপ। আমি আমার জীবনসঙ্গিনীকে সাহায্য করব, তিনিও আমাকে সাহায্য করবেন। দুজন মিলে একটা সংসার গড়ে তুলব। প্রচুর ঝড়-তুফান আসবে। কিন্তু বুড়ো-বুড়ি হওয়ার পরে যখন পেছন ফিরে তাকাব, তখন নিজেদের মজবুত ইমারত দেখে নিজেরাই মুগ্ধ হব। আপনাকে অবশ্য, অবশ্যই কোথাও না কোথাও ছাড় দিতেই হবে। আমরা কেউই পারফেক্ট নই। ইম্পারফেকশনের মধ্যেই আমাদের পারফেকশন। কথাটি মাথায় গেঁথে রাখুন।
Linkeei Official 3 yrs
খুব ভালো লিখেছেন।