ধৈর্য ধরে থাকো।

ইসলামিক ব্লগার আরিগ আজাদের ব্লগ ।

আপনি যদি আপনার দুঃখের কথা কাউকে বোঝাতে যান অথবা আপনার করুণ অবস্থা দেখে যদি কারো মনে দয়ার উদ্রেক হয়, তিনি আপনাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলবেন— 'ধৈর্য ধরে থাকো। কষ্টের পর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে সুখ দেবেন'।

তবে, এমন নিদারুন দুঃখ-কষ্ট নিয়ে যদি আপনি কুরআনের কাছে যান, কুরআন কিন্তু কখনোই বলবে না যে— 'কষ্টের পর সুখ আসবে।' বরং কুরআন আপনাকে বলবে— 'নিশ্চয় কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি।' [১]

কষ্টের সাথে স্বস্তি/সুখ কীভাবে থাকতে পারে আসলে? ব্যাপারটা আমি বোঝার চেষ্টা করলাম।

ধরা যাক একজন লোকের ঘরে কোন খাবার নেই। ক্ষুধায়-অনাহারে সকলে ক্লান্ত। চরম দুঃখ-কষ্টে কাটছে তাদের দিন। এমতাবস্থায় তার জন্য স্বস্তি কোথায়?

মজার ব্যাপার হচ্ছে— স্বস্তি বা সুখ যা-ই বলি না কেনো, সেটাকে আমরা সংজ্ঞায়িত করেছি টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ আর সচ্ছলতা দিয়ে। এসবের অনুপস্থিতিকে আমরা বুঝি দারিদ্র আর দুঃখ-কষ্ট হিশেবে। সুখকে এভাবে বুঝতে গিয়ে মাঝখান থেকে আমরা যে সত্যিকার জিনিসটাকে পাশ কেটে যাই সেটা হলো— অন্তরের প্রশান্তি।

খুবই দুঃখ আর দারিদ্র‍্যের মধ্যে বাস করেও, নিদারুন দুঃখ-দূর্দশার ভিতর দিয়ে গেলেও একজন মানুষের অন্তরে প্রশান্তি থাকতে পারে। আবার, দুনিয়া সেরা ধনী ব্যক্তি হয়েও, দুনিয়াজোড়া নাম-ডাক থাকা সত্ত্বেও একজন ব্যক্তির অন্তর সর্বদা বিক্ষিপ্ত আর বিষণ্ণ থাকতে পারে।

যে ব্যক্তির ঘরে খাবারের সংকট, সে যদি তার সর্বোচ্চটা দিয়ে রিযিক তালাশ করে এবং তাতে ব্যর্থ হয়, পরিবারের সকলকে নিয়ে সে যে শাক-ভাত খাচ্ছে, নতুবা একবেলা খেয়ে একবেলা উপোস করছে— তাতে কিন্তু তার আফসোস থাকে না কোন। সে জানে এটুকুই তার রিযিক এবং এটাই তার তাকদির। সে এটাকেই সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়৷

তার সামনে যদি হারাম পথে পা বাড়িয়ে রিযিক তালাশের কোন সুযোগ আসে, যেমন— চুরি-ডাকাতি করা, অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়া, লোক ঠকিয়ে টাকা রোজগার করা, এমন সুযোগকে সে পায়ে ঠেলে দেয়। কারণ সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালাকে ভয় পায়। পরিবার নিয়ে সে উপোস করতে করতে মরে যেতে রাজি, কিন্তু হারামের পথে এক কদম দিতে সে রাজি নয়।

নিদারুন দুঃখ-কষ্ট সত্ত্বেও, তাকওয়ায় টইটম্বুর অন্তর নিয়ে যখন সে সালাতে দাঁড়ায়, দুনিয়ার সকল দাতার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে যখন সে চোখের পানি ফেলে কেবল সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা 'আর-রাজ্জাক' এর দিকে মুখ ফেরায়, তখন তার ক্ষুধার কষ্ট, সংসারের ঘানি টানবার ক্লান্তি— সমস্তকিছুকে তার সাময়িক পরীক্ষা মনে হয় এবং সে জানে এর উত্তম প্রতিদান তার জন্যে অপেক্ষা করে আছে। অন্তত দুনিয়াতে না-হোক, অনন্ত আখিরাতে তার রব তাকে এতো পরিমাণ দিবেন যে সে খু্শি হয়ে যাবে।

আবার, দুনিয়া সেরা কোন এক ধনী লোক, ধরা যাক তার বি-শা-ল একটা ব্যবসায়িক প্রজেক্ট একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে মুখ থুবড়ে পড়লো। এখন তার অন্তরে যদি তাকওয়া না থাকে, এই প্রজেক্টকে সে যেকোনপ্রকারে, ন্যায়-অন্যায়ের বাছ-বিচার না করে দাঁড় করাতে চাইবে। তাতে কার কী ক্ষতি হলো, কার কী এলো-গেলো তা নিয়ে সে একটুও ভাববে না। সে শুধু ব্যবসা বুঝে আর বুঝে টাকা। কেবল টাকা হাতে এলেই সে শান্তি পায়।

তার অন্তরে যদি তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর ওপর ভরসা না থাকে, তার এহেন ক্ষতিকে সে 'তাকদির' হিশেবেও মেনে নিতে চাইবে না। এই ক্ষতিকে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা এবং এর বিনিময়ে দুনিয়া কিংবা আখিরাতে উত্তম বিনিময় লাভের যে ধারণা ইসলাম দেয়, সেটাকে সে থোড়াই কেয়ার করে। ফলে, তার যদিও অঢেল সম্পদের পাহাড়, তথাপি যেকোন ক্ষতিতে, যেকোন সমস্যায় সে বিচলিত হয়ে পড়ে। তার অন্তর থেকে বিলুপ্ত হয় প্রশান্তি। এমন বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন আর বিষণ্ণ অন্তর নিয়ে সে যদি কোটি টাকার বিছানায় ঘুমায়, দুনিয়া-সেরা মডেলের গাড়িতে চড়ে, তবুও সেই শান্তি সে পায় না যে শান্তি ক্ষুধা পেটে নিয়ে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে ওই দরিদ্র ব্যক্তি পায়।

কষ্টের সাথে তখনই স্বস্তি থাকে যখন অন্তরে তাকওয়া আর তাওয়াক্কুলের জোয়ার আসে।

রেফারেন্সঃ

[১] সুরা আল ইনশিরাহ, আয়াত- ০৫

কুরআন থেকে নেওয়া জীবনের পাঠ-০৫


Msi Anik Sarkar

2 Blog posts

Comments
Jesus Weidman 2 yrs

Jorapata is a social media marketing agency in the USA with great experience in developing and executing effective campaigns that drive leads and sales for the business. site https://www.jorapata.com/