বানারীপাড়ার ইতিহাস

বানারীপাড়া বাংলাদেশের বরিশাল জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

বানারীপাড়া বাংলাদেশের বরিশাল জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা যা ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত ১০টি উপজেলার একটি। বানারীপাড়ায় মোট ১১টি ওয়ার্ড, ৮৭টি মহল্লা এবং ৭৭টি গ্রাম রয়েছে।

 

ইতিহাসঃ

ব্রিটিশ শাসনামলে প্রশাসন বানারীপাড়া থানা গঠিত হয় ১৯১৩ সালে এবং স্বাধীনতার পর ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় সংসদে বরিশাল-২ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত। এটি বরিশাল জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ১২০নং আসন।

 

সম্রাট আকবরের আমলে মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করদ মিত্র রাজ্য হিসেবে চন্দ্রদ্বীপ রাজা কন্দর্পনারায়ণ শাসন করতেন। চন্দ্রদ্বীপের পশ্চিমে বৃহৎ এক অঞ্চল এমনিতে পড়ে ছিল। দিল্লির সম্রাটপুত্র শাহজাদা সেলিম বিদ্রোহ করে এ অঞ্চলে পালিয়ে আসেন সঙ্গীসাথী নিয়ে। অনাবাদি এ অঞ্চলের নাম তিনি রাখেন সেলিমাবাদ। এ অঞ্চলের অধিকাংশ অংশ এর পূর্বে সুগন্ধা নদীর মধ্যে ছিল, ধীরে ধীরে তা জেগে ওঠে। সুগন্ধা নদীর বুকে জেগে ওঠা এ জনপদকে ‘সোন্ধার কূল’ নামে অভিহিত করা হয়। সোন্ধারকূলের সেই নদীই বানারীপাড়ার বুক চিরে প্রবাহিত হওয়া সন্ধ্যা নদী। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে জানকী বল্লভ রায় চৌধুরী মুর্শিদাবাদের নবাবদের থেকে জমিদারী লাভ করেন। এরপর তিনি বানারীপাড়া এসে বসতি স্থাপন করেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি এবং জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর এ জমিদারগণ ভারতে চলে যান।

 

বানারীপাড়া উপজেলা আয়তনের দিক দিয়ে বরিশালের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। এই উপজেলার নামকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মত রয়েছে। এখানে এক সময় বনিক সম্প্রদাইয়ের বানিয়াতী ব্যবসা ছিল। তারা এখানে বসবাস করতেন। বানীয়া শব্দ থেকে বানারীপাড়া শব্দটির প্রচলন হতে পারে। এছাড়া “বান” এবং “অরি” শব্দের সমন্বয়ে বানারীপাড়া নামকরণ হয়েছে বলে তথ্য প্রমাণ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই উপজেলার গাভায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতন পরিচালিত হয়। এ উপজেলার গাভা গ্রামে পাকবাহিনী প্রায় ২১২ জনকে হত্যা করে। বিশেষ করে দক্ষিণ গাভা নরের কাঠী বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয় শতাধিক ব্যক্তিকে।

 

রাজনীতিঃ

বরিশাল-২ নির্বাচনী এলাকায় ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সংসদ নির্বাচনের সময় গঠিত হয়েছিল। প্রথম এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নজরুল ইসলাম নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির সৈয়দ আজিজুল হক, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জুনমাসে গোলাম ফারুক অভি, ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এবং এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে ২০০৮ সালে মনিরুল ইসলাম মনি, ২০১৪ সালে তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস এবং ২০১৮ সালে শাহে আলম তালুকদার নির্বাচিত হয়।

 

শিক্ষাঃ
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বানারীপাড়া উপজেলার সাক্ষরতার হার ৯৭.২%। শিক্ষানুরাগী বসন্ত কুমার গুহঠাকুরতা ১৮৮৯ সালের ১ এপ্রিল বানারীপাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন (পাইলট) স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন।অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শের-ই বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৪০ সালে তার এলাকা বানারীপাড়ার চাখারে ৩৫ একর জমির ওপর নিজ নামে ফজলুল হক কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়।১৯৮৪ সালে বানারীপাড়ায় বধির শিশুদের জন্য হাইকেয়ার স্কুল বানারীপাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়। উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য বানারীপাড়া, বাইশারী, গুঠিয়া ও চাখারে কলেজ রয়েছে যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিএ ও এমএ ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া স্নাতকও চালু রয়েছে।


Md Parvaj Mollick

3 Blog posts

Comments