ভুল-ভাল
ইস্কুলের সামনের দোকানটায় এসে ভীড় ঠেলে কোনোমতে কাউন্টারের ওপর এক মুঠো খুচরো পয়সা ছড়িয়ে দেয় বছর সাতেকের মেয়েটা। হাঁফাতে হাঁফাতে বলে ওঠে, "কাকু চকোলেট…"
দোকানদার একবার অবাক চোখে তাকায় মেয়েটার দিকে, তারপর কৌটো খুলে কতকগুলো রঙিন মোড়ক ধরিয়ে দেয় তার হাতে। মহানন্দে সেগুলো নিয়ে আবার ভীড় ঠেলে রাস্তায় নামে মেয়েটা; একবারও জানতে চায়না চকোলেটগুলোর দাম কত কিংবা পয়সা ঠিকঠাক আছে কিনা। আসলে আজ তো তার জীবনে প্রথমবার "শপিং" এর অভিজ্ঞতা। বন্ধুদের সামনে এবার সেও দেখাতে পারবে কতটা বড়লোক সে।
দোকান থেকে গর্বিত ভঙ্গিতে ক্লাসে আসে মেয়েটা। বন্ধুদের মধ্যে কয়েকটি চকোলেট বিলিয়ে দেয় আগে; তারপর ঠোঁটের কোণে বিজয়িনীর হাসি নিয়ে একটা মোড়ক খোলে সে নিজে। কিন্তু মুখে ভরতে যেতেই আচমকা বুকের কাছটা কেমন ব্যথা করে ওঠে, হাতটা কাঁপতে শুরু করে। মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে হঠাৎ করে; মুখের হাসিটাও উধাও হয়ে যায় নিমেষে। চকোলেটটা জোর করে মুখে ভরে সে কিন্তু মিষ্টি স্বাদের বদলে কেমন যেন বিদঘুটে লাগে খেতে। খাওয়া যায়না আর।
"মিমি এই তাকে ভিখিরী এলে দেওয়ার জন্য যে খুচরো পয়সাগুলো থাকত সেগুলো কোথায় গেল তুই জানিস? একটা এক টাকার কয়েন ছাড়া কিছুই পড়ে নেই... আশ্চর্য…!"
স্কুল থেকে বাড়িতে ঢুকতেই মায়ের গলাটা কানে যায় মেয়েটার। মায়ের এই আপাত শান্ত প্রশ্নেও কেঁপে ওঠে তার শরীর। মায়ের চোখের দিকে তাকাতে পারে না সে, চোখ নামিয়ে নেয় নীচে।