কেনিয়া মাত্র ১২ টন খাদ্যশস্য ভারতকে সাহায্য পাঠানোয়, সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু পোষ্ট দেখে খুব অবাক হলাম। 'ভিখারী', 'ভিখমাঙ্গা', 'গরীব' ইত্যাদি বলে কেনিয়াকে সম্বোধন করা হচ্ছে!
সকলে আমেরিকার নাম তো অবশ্যই শুনেছেন। ম্যানহাটন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নামও সবার শোনা এবং ওসামা বিন লাদেনের নামটাও সকলের জানা। তবে যেটা সকলের জানা নেই সেটা হল ইনোসাইন গ্রামের কথা, এই গ্রামটি পড়ে কেনিয়া এবং তানজানিয়া বর্ডারের কাছে, এখানকার জনজাতি কে বলা হয় মাসাই। আমেরিকার উপর ৯/১১র হামলার কথা এদের কাছে পৌঁছাতে কয়েক মাস লেগে যায়। এই খবর তাদের কাছে তখনই পৌঁছায় যখন কিমেলি নোয়ামা নামের একটি মেডিক্যাল স্টুডেন্ট ছুটিতে বাড়ি ফেরে। নোয়ামি স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ছিলেন এবং ঐ গ্রামের পাশের একটি কসবা অঞ্চলে বাস করতেন। নোয়ামা তার চোখে দেখা ৯/১১ ঘটনার বিবরণ মাসাইদের শোনান।
মাসাইরা আমেরিকার এই দূঃখে সমব্যাথি হয় এবং ঐ মেডিক্যাল স্টুডেন্টের মাধ্যমে একটি চিঠি কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্হিত আমেরিকার দূতাবাসে পৌঁছায়। ঐ চিঠি পড়ে দূতাবাসের ডেপুটি চিফ উইলিয়াম ব্রাকিং প্রথমে বিমানে তারপর বেশ কয়েক মাইল ভাঙাচোরা রাস্তা অতিক্রম করে মাসাই জনজাতিদের গ্রামে পৌঁছান।
গ্রামে পৌঁছে উইলিয়াম ব্রাকিং দেখেন গ্রামের লোকজন একত্রিত হয়েছেন এবং ১৪ টি গরু সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো আছে। একজন বয়স্ক ব্যক্তি গরুর দড়ি ব্রাকিংএর হাতে দিয়ে একটি ফলক বা লেখার দিকে দিকে তাকাতে ইশারা করেন, ঐ ফলকে লেখা ছিল "এই দূঃখের সময়ে আমরা আমেরিকার পাশে আছি এবং আমেরিকার মানুষকে সাহায্য করার জন্য ১৪টি গরু দান করছি"। হ্যাঁ, সেই চিঠিটা পড়ে পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী দেশের রাজদূত হাজার মাইল অতিক্রম করে ১৪টি গরুর দান নিতে গেছিলেন।
ঐ গরু আমেরিকাতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি আইনি বাধা এবং গরুর ট্রন্সপোর্টিঙের অসুবিধার কারনে। গরুগুলো বিক্রি করে মাসাই দের আভূষন ৯/১১র মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এই বিষয়টি যখন আমেরিকার সাধারণ মানুষরা জানতে পারে তখন কি হয়? হুল্লোড় শুরু হয়ে যায়, তারা জেদ ধরে আভূষন নয় ঐ গরুই চাই। নানা ইমেল এবং বহু অনলাইন পিটিশন সাইন করা হয়, নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে গরুগুলো দেশে আনা হয়।
আমেরিকাবাসিরা মাসাই ও কেনিয়ার এই অভূতপূর্ব ভালোবাসা ও সমবেদনার জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ ভাবে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানায়।
১২ টন শষ্য কৃতজ্ঞ হয়ে স্বীকার করুন এবং ভাবুন এরকম পরিস্থিতি কেন তৈরি হল। দান নয় দানীর হৃদয় দেখুন, তাকে শ্রদ্ধা করুন।
সংগৃহীত
Saiful Islam
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?