একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে: ৩০৩
ইসমে আজমের দোয়া
-----
১: মানুষের চাওয়ার কোনও শেষ নেই। নিজের চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তরিত করতে মানুষ নানা উপায়ের আশ্রয় গ্রহণ করে। কেউ অসদুপায় অবলম্বন করে। কেউ সৎপথ অবলম্বন করে। চাহিদা পূরণের সর্বোত্তম মাধ্যম হল দোয়া। দোয়া মুমিনের শ্রেষ্ঠতম হাতিয়ার। দোয়া করার সুন্নত তরীকা আছে। নবীজির শেখানো পদ্ধতিতে দোয়া করলে, দোয়া কবুলের ব্যপারে নিশ্চিত থাকা যায়।
২. নবীজি ইসমে আযম দিয়ে দোয়া করতেন। ইসমে আযম মানে, মহান সত্ত্বার নাম অথবা আল্লাহ তাআলার ‘মহান নাম’। দোয়ার সাথে আল্লাহর নাম লাগিয়ে দিলে, আল্লাহর নামের উসীলা দিয়ে দোয়া করলে, দোয়ার শক্তি আর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলার অগণিত নাম আছে। হাদীসে বিশেষ কিছু নামকে ‘ইসমে আযম’ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। হাদীসের ভাষ্য দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহ তা‘আলা চান, আমরা যেন এসব মহান নামসমূহ দিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। আমরা বিভিন্নভাবে আল্লাহর বিশেষ নামগুলো মিশিয়ে দোয়া করলে, আল্লাহ খুশি হন।
৩. আমরা দোয়ায় যতবেশি আল্লাহর প্রশংসা করতে পারি, ততই ভাল। আমাদের প্রশংসা পেলে আল্লাহ ভীষণ খুশি হন। দোয়াতেও বৈচিত্র্য আসে। আনাস রা. হতে বর্ণিত,
دَخَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم المَسْجِدَ وَرَجُلٌ قَدْ صَلَّى وَهُوَ يَدْعُو وَيَقُولُ فِي دُعَائِهِ:
নবীজি একদা মসজিদে প্রবেশ করলেন। মসজিদে একলোক সলাত আদায় করে দোয়া করছিল। দোয়াতে লোকটি বলছিল,
اللَّهُمَّ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ المَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ ذَا الجَلَالِ وَالإِكْرَامِ.
ইয়া আল্লাহ! আপনি ছাড়া আর কোনও ইলাহ নেই। আপনি মহা অনুগ্রহকারী। আপনি আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকারী। আপনি গৌরবময় ও মহানুভব।
فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: ্রأَتَدْرُونَ بِمَ دَعَا اللَّهَ؟ دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الأَعْظَمِ، الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ، وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى
নবীজি বললেন, তোমরা কি জানো সে কী দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছে? সে আল্লাহর স্বীয় ইসমে আযম দিয়ে দোয়া করেছে। ইসমে আযম দিয়ে দোয়া করলে, আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। কিছু চাওয়া হলে তিনি পূরণ করেন (তিরমিজী ৩৫৪৪)।
৪. আরেক বর্ণনায় লোকটির দোয়ার সূচনা এভাবে,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ، الْمَنَّانُ، بَدِيعُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ. فَقَالَ: ্রلَقَدْ سَأَلَ اللَّهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ، الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى، وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَগ্ধ.
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, কারণ সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আপনারই প্রাপ্য। আপনি ছাড়া আর কোনও উপাস্য নেই। আপনি এক। আপনার কোনও শরীক নেই। আপনি মান্নান.. (ইবনে মাজাহ ৩৮৫৮)।
৫. উপরোক্ত তিনটি ইসমে আযম ছাড়া আরও চারটি ইসমে আযমের কথাও নবীজি বলে গেছেন,
اسْمُ اللَّهِ الأَعْظَمُ فِي هَاتَيْنِ الآيَتَيْنِ:
আল্লাহর ইসমে আযম এই দুটি আয়াতে আছে,
وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ
তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ, তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি সকলের প্রতি দয়াবান, পরম দয়ালু (বাকারা ১৬৩)।
الم اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ
আল্লাহ তিনিই, যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। যিনি চিরঞ্জীব, সমগ্র জগতের নিয়ন্ত্রক (আলে ইমরান ২)।
৬. আরও কয়েকটি নামকে নবীজি ইসমে আযম বলে গেছেন। বুরাইদা রা. বর্ণনা করেছেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ:
আল্লাহর রাসূল এক ব্যক্তিকে দোয়া করতে শুনলেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، الْأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ، وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ.
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আপনিই আল্লাহ। আপনি ছাড়া আর কোনও উপাস্য নেই। আপনি একক। আপনি সম্পূর্ণরূপে অমুখাপেক্ষী। আপনি এমন সত্ত্বা যিনি কাউকে জন্ম দেননি। নিজেও কারো থেকে জন্ম নেননি। তাঁর কোনও সমকক্ষ নেই।
فَقَالَ: ্রلَقَدْ سَأَلْتَ اللَّهَ بِالِاسْمِ الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى، وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَগ্ধ.
আল্লাহর রাসূল দোয়াকারীকে বললেন, তুমি আল্লাহর এমন নাম দিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছ, যে নামগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাওয়া হলে, তিনি দিয়ে দেন। এগুলোর উসীলা দিয়ে দোয়া করা হলে, তিনি কবুল করে নেন (আবূ দাউদ ১৪৯৩)।
৭. নবীজি আরও বলেছেন,
اسْمُ اللهِ الْأَعْظَمُ الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ, فِي سُوَرٍ ثَلَاثٍ: الْبَقَرَةِ، وَآلِ عِمْرَانَ, وَطه
আল্লাহর ইসমে আযম এমন, এগুলোর মাধ্যমে দোয়া করা হলে, আল্লাহ দোয়া কবুল করে নেন। ইসমে আযম তিনটি সূরায় আছে-বাকারা, আলে ইমরান আর তোয়াহায় (আবূ উমামা বাহেলী রা.। ইবনে মাজাহ ৩৮৫৬)।
৮. বিশিষ্ট তাবেয়ী কাসেম বিন আবদুর রহমান মনে করেন, এই তিন সূরায় ‘আলহাইয়ুল কাইয়ূম’ ইসমে আযম বারবার আলোচিত হয়েছে (হাকেম ১৮৬৬)।
৯. আল্লাহ তা‘আলার নাম নিতে কষ্ট কিসের? রাব্বে কারীমের নাম জপা মুমিনের সবচেয়ে প্রিয় কাজ। মুমিনের জন্য সবচেয়ে প্রশান্তিকর কাজ হল আল্লাহর নামের যিকির করা। মুনাজাতেও আল্লাহর নাম নিলে মনে বাড়তি প্রশান্তি নেমে আসবে। ফলে মুনাজাতেও বাড়তি মনোযোগ আসবে। দোয়া কবুল তো হবেই। রাব্বে কারীম সুন্নতখানা পালন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।