সংবাদ সম্মেলনে বিয়ে ও পরিচালককে মারপিট– নিয়ে প্রশ্নে বিব্রত নায়িকা
***********************************************************************
গত ২৩ জুন গুলশান থানায় চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও চুরির মামলা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ভবনমালিক ও রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই দ্বন্দ্ব হয়। এ ঘটনায় ববির পক্ষ থেকে পাল্টা মামলার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনা নিয়ে গতকাল পর্যন্ত মুখ খোলেননি ববি। আজ সোমবার ঘটনা খোলাসা করার জন্য সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে হত্যাচেষ্টা ও চুরির ঘটনা ছাপিয়ে আলোচনায় জায়গা করে নেয় ববি বিয়ে ও সম্প্রতি তাঁর অভিনীত ময়ূরাক্ষী সিনেমার পরিচালক রাশিদ পলাশ নামের এক পরিচালককে মারপিট করার মতো প্রসঙ্গগুলো। মূল ঘটনার বাইরে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খান ববি।
সংবাদ সম্মেলনে ববি বলেন, ‘আমার রেস্টুরেন্ট ভেঙেছে, আমার লোকদের মেরেছে। হাসপাতালের ভর্তি থাকতে হয়েছে আমার লোকদের। সব দিক দিয়ে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। আমার নামে কখনো কোনো জিডি হয়নি। মামলা কখনোই হয়নি। করিনিও কোনো দিন; অথচ তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যাচেষ্টা ও চুরির মামলা করেছে। আমি তাদের কাছে ভবনের বৈধ কাজপত্র চেয়েছি। সেটা না দিয়ে, দিনের পর দিন ঘুরিয়ে পরে তারা সন্ত্রাস দিয়ে আমাদের লোকদের মেরেছে। সেগুলো ধামাচাপা দিতেই মামলা করেছে।’
ববির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল চেক ডিজঅনার নিয়ে। সেই প্রসঙ্গে ববি জানান, এটা সত্য নয়। তাঁরা ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। আরও ৪০ লাখ টাকার চেক দেওয়া আছে। তিনি বলেন, ‘আমি সৎ ভাবেই রেস্টুরেন্ট দাঁড় করানোর জন্য প্রায় ৭৫ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করেছি। রেস্টুরেন্টটি ভাড়া নেওয়ার পরে আমরা জানতে পারি, যাঁদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছি, তাঁরা দুজন পার্টনার ছিলেন। তাঁদের একজন আমাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। পরে কাবু ভাই নামের আরেক পার্টনার আমাদের ফোন দিয়ে বলেন, ‘‘আপনারা ভুল করলেন তার হাতে টাকা দিয়ে। ইনভেস্টর আমি ছিলাম। যাকে টাকা দিয়েছেন, সে বাড়িওয়ালার কাছে অনেক টাকা বাকি রেখেছে।’’ পরে সব ক্লিয়ার হয়। বুঝতে পারি, তাঁদের নিজেদের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব ছিল। এটাকে পুঁজি করে ভবনমালিক ও যাঁর কাছে টাকা দিয়েছি, তাঁরা পরিকল্পনা করে নতুন কাউকে যুক্ত করে এভাবে টাকা নেওয়ার ফন্দি করেছিলেন। সেটিই ছিলাম আমরা। আমাদের কাছে এখন সব পরিষ্কার।’’
সংবাদ সম্মেলনে এসব নিয়ে কথা বলার সময়েই হঠাৎ তাঁর বিয়ে প্রসঙ্গ সামনে আসে। কেউ কেউ জানতে চান, ববি একজন ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছেন। এ ঘটনার মধ্যে হঠাৎ কীভাবে বিয়ের প্রসঙ্গ এল, সেটা ভেবে অবাক হয়ে যান ববি। তিনি বলেন, ‘আমি বিয়ে করেছি আমিই জানি না। কে কোন ব্যবসায়ী, সেটা তো আরও চিনি না। এ জন্যই বলছি, আমি যেহেতু চিত্রনায়িকা, আমার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা লিখে মানুষের কাছে এন্টারটেইনিং বিষয়ে রূপ দেওয়া সহজ। এটাই তারা হাতিয়ার করেছে। ভেবেছে আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা নিউজ করে দেবে আমি সামনে আসব না।’
একের পর এক দুই পক্ষ বসে ঘটনার মীমাংসা করার কথা ছিল। কিন্তু লুকোচুরি করে এভাবে বসতে চাননি বলে জানান ববি। কারণ সেখানে বারবার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে। এভাবে দেরি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েন এই নায়িকা। তাঁর দাবি, কাগজপত্র ও নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে চাইলে ভবনের মালিকেরা রেস্টুরেন্ট ভাঙচুর করেন, ববির লোকদের মেরে চুরি ও হত্যাচেষ্টার মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ঘটনাগুলো যখন একের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাখ্যা করছিলেন, তখন সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চান, পরিচালক রাশিদ পলাশকে থাপ্পড় মেরেছিলেন কি না? তাঁর সঙ্গে কী ঘটেছিল?
কিছুটা বিব্রত হতে দেখা যায় ববিকে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা প্রযোজক ভালো বলতে পারবেন। তাঁরা আসছেন। তাঁদের বাসায়ই সেদিন কথা হয়েছে। তাঁরা পথে আছেন। এলেই জানতে পারবেন। আর রাশিদ পলাশ যেভাবে কথা দিয়েছেন সেভাবে কাজ করতে পারেননি। তা ছাড়া আমার নাম ভাঙিয়ে তিনি অনেকবার তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। যেখানে আমি নিজের পেমেন্টই পুরোটা পাইনি। টাকা নিয়ে পলাশের সঙ্গে অনেকবার ঝামেলা হয়েছে। শেষের দিকে ডিস্ট্রিবিউশন নিয়েও ঝামেলা করেছে। শুটও ঠিকমতো করেননি।’
কথার ফাঁকে সাংবাদিকেরা বারবার জানতে চান পরিচালকের গায়ে হাত তুলেছেন কি না? এ প্রসঙ্গে উত্তর দিচ্ছিলেন না ববি; কিন্তু একের পর এক একই প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ববি। তিনি জানান, রাশিদ পলাশের সঙ্গে কাজ করাটাও ভুল হয়েছে, সে অনেক নাটকের জন্ম দিয়েছে, শুটিং সেটে অপেশাদার আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেন ববি; কিন্তু সেই ‘ময়ূরাক্ষী’ সিনেমার পরিচালক রাশিদ পালাশকে থাপ্পড় মারার ঘটনাই বারবার ঘুরেফিরে আসে। সাংবাদিকেরা কেউ কেউ বলেন একটি গণমাধ্যমের কাছে থাপ্পড় মারার ভিডিও রয়েছে। তখন ববি বলেন, ‘আমি এমন কোনো ভিডিও দেখি ও পাইনি।’ কিন্তু থাপ্পড় আসলেই মেরেছিলেন কি না, সেটা নিয়ে কোনো উত্তর দেননি।
source : প্রথম আলো