এই ছবির নাম কেউ দিতে পারেনি।

না পাঠক, কেউই পারেনি। এমনকি ছবির চিত্রগ্রাহকও—যিনি ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো’র একজন খ্যাতিমান ফটোগ্রাফার—আজীবন নিরব থেকেছেন এই ছবির নাম নিয়ে প্রশ্ন করা হলে। কারণ, এ ছবির নাম দেয়া যেন শব্দকে অপমান করা।

ছবিতে দুইজন মানুষ। একজন মা—সোমায়েহ্ মেহরি, মাত্র ২৯ বছর বয়সী এক তরুণী। আরেকজন তাঁর মেয়ে—মাত্র ৩ বছর বয়সী রানা আফগানিপোর। তাঁরা থাকেন দক্ষিণ ইরানের ব্যাম শহরে।

কিন্তু এক ভয়াল রাতে, তাঁদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি—সোমায়েহ্'র স্বামী, রানা'র পিতা—অ্যাসিড ছুঁড়ে দিল স্ত্রীর ও সন্তানের শরীরে। ভয়াবহ সেই হামলায় হারিয়ে গেল দুজনের চিরচেনা চেহারা। চিরতরে।

বহু অস্ত্রোপচার, অসংখ্য যন্ত্রণার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে ও তাঁর শিশুকে ফিরিয়ে আনলেন মৃত্যুর মুখ থেকে। এরপরই, হাসপাতালের এক নিস্তব্ধ ঘরে, ঘটে এই দৃশ্য—মা ও মেয়ের প্রথম সাক্ষাৎ।

কী অনুভব করেছিলেন সোমায়েহ্, মেয়ের চোখে নিজের নতুন রূপ দেখে? ফেটে গিয়েছিল কি ছোট্ট রানা’র হৃদয়, নিজের মায়ের এমন এক রূপ দেখে, যাকে সে চিনতে পারছে না? ফটোগ্রাফার তাঁর ঝাপসা চোখে তুলে নিলেন মুহূর্তটি ক্যামেরায়। চারপাশ তখন নিশ্চুপ কান্নায় ভেসে যাচ্ছিল।

সেই সময়, কোনো ভয় কিংবা দ্বিধা ছাড়াই ছোট্ট রানা ছুটে গেল তাঁর মায়ের দিকে। সোমায়েহ্ তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন বুকের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই, জন্ম নিল এক চুমু—যা হয়তো মানব ইতিহাসে আর কখনও কেউ দিতে পারেনি। এ ছিল মমতার চুমু। দুঃখের চুমু। অস্তিত্বকে ছুঁয়ে যাওয়ার চুমু। এই দৃশ্যের কী নাম দেবেন আপনি?

তবুও, মানুষ বেঁচে থাকবে। আরও বিলিয়ন বছর। তবুও, কোনো একদিন একজন পিতা তাঁর মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বলবেন "আছি তো মা! আছি তো!" একজন স্ত্রী আর কখনো ভয়ে কুঁকড়ে দাঁড়াবেন না তাঁর স্বামীর সামনে। মানবজাতিকে কত বিলিয়ন বছর লাগবে এমন দিন দেখতে? এই ছবিতে একটি মা—অ্যাসিডে দগ্ধ মুখে—তাঁর মেয়েকে ঘুমের ভেতরে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন।

"ভয় লাগে মা?"
পৃথিবী, তুই কী করে উত্তর দিবি? আর না হোক এমন দৃশ্য। আর না আসুক এমন সকাল যেখানে ভালোবাসার বদলে এসিড ছুঁড়ে দেয় প্রিয়জন। মানুষ মানুষকে ভালোবাসুক। রানা, তুমি ভালো থেকো তোমার মায়ের বুকে। রূপে কী আসে যায়?

এই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর চুমু।

image