ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় ৩২ বছর আগের। জায়গাটা চট্টগ্রামের দক্ষিণ পাশে, পাহাড়ি একটা গ্রামে—নাম হাড়িভাঙা। তখন গ্রামের মধ্যে বিদ্যুৎ ছিল না, সন্ধ্যা নামলেই কুয়াশা আর অন্ধকার একসাথে ঘিরে ফেলত পুরো এলাকা। গল্পটা শুরু হয় রহিম কাকার বয়স যখন মাত্র ১৩। সবে হাফেজি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছেন, পরিবার তাকে জোর করেই পাঠিয়েছে হোস্টেলে।
একদিন বর্ষাকালীন সন্ধ্যায়, রহিম কাকা মাগরিবের নামাজ পড়ে ফিরছিলেন। হোস্টেল থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটার দূরত্বে ছিল একটা পুরনো শ্মশান, যদিও সেটি হিন্দু শ্মশান ছিল, এলাকাবাসী বলত ওখানে মাঝে মাঝে কিছু ‘অদেখা ছায়া’ ঘোরাফেরা করে।
সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। রহিম কাকা ছাতা ছাড়া হাঁটছিলেন, কাপড়-চোপড় ভিজে একাকার। যখন শ্মশানের পাশে এসে পৌঁছান, হঠাৎই টের পান যেন কেউ তাঁর পেছনে পেছনে হাঁটছে। কাঁপা কাঁপা গলায় কলমা পড়ে পেছনে তাকান—একটা অজগর সাপ দাঁড়িয়ে। সাপটা অদ্ভুতভাবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল, যেন কোনো কিছু বলতে চাইছে। ভয় পেয়ে কাকা রাস্তা থেকে একটা কাঠ তুলে সাপটাকে ছুঁড়ে মারেন। সাপটার একটা কান্নার মত আওয়াজ করে ঝোপের ভেতরে মিলিয়ে যায়।
সেই রাতে হোস্টেলে ফিরে এসে, হালকা জ্বর নিয়ে শুয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক দুইটা বাজে। ঘুম ভেঙে যায় প্রস্রাবের চাপে। টয়লেটে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসেন। কিন্তু হঠাৎই টের পান—তিনি একা নন সেখানে। চারদিকে তাকাতে থাকেন। ঠিক তখনই তার চোখ পড়ে টয়লেটের উপর। ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটি বিভৎস মুখ। পুরো মাথাটাই যেন কেটে ফেলা হয়েছে—চুল টেনে টেনে ফ্লোরে পড়ে আছে। লালচে চোখ যেন যেকোনো সময় রক্তে ভরে যাবে। সেই মাথা রহিম কাকার চোখে চোখ রেখে বলল, “তুই আমার শান্তি নষ্ট করছিস। তোকে ছাড়ব না!”
এই দৃশ্য দেখে তিনি চিৎকার করে ওঠেন। অন্য ছাত্ররা ও হুজুর ছুটে আসেন। রহিম কাকা তখন এতটাই আতঙ্কে ছিলেন যে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। পরে সবাইকে বিস্তারিত বলেন—সাপ, শ্মশান, সেই ভয়ানক মাথা সব কিছু।
হুজুররা সঙ্গে সঙ্গে এক হুজুরের তাবিজ পরিয়ে দেন। এরপর থেকেই রহিম কাকার পড়াশোনার আগ্রহ কমে যায়। হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে যান।
বছর চারেক পর। রহিম কাকার বিয়ে ঠিক হয় পাশের গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে। পাকা কথা হয়ে গেছে, দিন-তারিখও ঠিক। বিয়ের বাজার করতে তিনি শহরে যান, চট্টগ্রাম নগরীতে। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। ফেরার পথে রাত হয়ে যায়। সড়ক ছিল কাদায় ভরা, এক পাশে বয়ে যাওয়া খালের পাশে দিয়ে যেতে হচ্ছিল।
হঠাৎ তিনি দেখতে পান, সাদা শাড়ি পরা এক মহিলা দূর থেকে হেঁটে আসছেন। ভেজা কাপড়ে তার শরীরের গড়ন স্পষ্ট, কিন্তু মুখটা... মুখটা যেন কোনোভাবে বিকৃত! যখন মহিলাটি তার খুব কাছে আসেন, তখন মুখটা খুলে হাসেন। সেই হাসির শব্দ কাকার বুক কাঁপিয়ে দেয়।
তিনি ভয় পেয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে মহিলাটিকে অতিক্রম করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই মহিলাটি বলে ওঠে, “ভেবেছিস, আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবি?
এই কথা শুনেই রহিম কাকার গলা আটকে যায়, কিছু বলতে পারেন না, পা কাঁপতে থাকে। হঠাৎই মনে হয়, কেউ যেন তার গলা টিপে ধরেছে। নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না তিনি। কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
সেই রাতেই রহিম কাকা নিখোঁজ হন। পরদিন বাজারের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায় খালের পাশে, কিন্তু তাঁর কোনো খোঁজ মেলেনি। পরিবার খোঁজাখুঁজি করতে করতে একেবারে দিশেহারা হয়ে যায়। থানায় খবর দেওয়া হয়, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও ছাপা হয়।
তিন সপ্তাহ পর, এক রাতে বাড়ির দরজায় ধাক্কার শব্দ হয়। সবাই ঘুমিয়ে ছিল। দরজা খুলে দেখে—রহিম কাকা! তার শরীর ভেজা, কাদায় ভর্তি, চোখ দুটো যেন অন্যমাত্রায় কাঁদা। দরজার সামনেই পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
পরে জ্ঞান ফিরলে পরিবারের সবাই জানতে চায় কী হয়েছিল। রহিম কাকা শুধু বলেন, “আমি ফিরে আসিনি, আমাকে কেউ ছেড়ে দিয়েছে।” এরপর আর কিছু বলেননি। আর কেউ তাকে জিজ্ঞেস করেওনি।
আবারও বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। নতুন করে মেয়ে দেখা হয়, পছন্দও হয়। বিয়ের দিন নির্ধারিত হয় বর্ষার শেষ রাতে।ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় ৩২ বছর আগের। জায়গাটা চট্টগ্রামের দক্ষিণ পাশে, পাহাড়ি একটা গ্রামে—নাম হাড়িভাঙা। তখন গ্রামের মধ্যে বিদ্যুৎ ছিল না, সন্ধ্যা নামলেই কুয়াশা আর অন্ধকার একসাথে ঘিরে ফেলত পুরো এলাকা। গল্পটা শুরু হয় রহিম কাকার বয়স যখন মাত্র ১৩। সবে হাফেজি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছেন, পরিবার তাকে জোর করেই পাঠিয়েছে হোস্টেলে।
একদিন বর্ষাকালীন সন্ধ্যায়, রহিম কাকা মাগরিবের নামাজ পড়ে ফিরছিলেন। হোস্টেল থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটার দূরত্বে ছিল একটা পুরনো শ্মশান, যদিও সেটি হিন্দু শ্মশান ছিল, এলাকাবাসী বলত ওখানে মাঝে মাঝে কিছু ‘অদেখা ছায়া’ ঘোরাফেরা করে।
সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। রহিম কাকা ছাতা ছাড়া হাঁটছিলেন, কাপড়-চোপড় ভিজে একাকার। যখন শ্মশানের পাশে এসে পৌঁছান, হঠাৎই টের পান যেন কেউ তাঁর পেছনে পেছনে হাঁটছে। কাঁপা কাঁপা গলায় কলমা পড়ে পেছনে তাকান—একটা অজগর সাপ দাঁড়িয়ে। সাপটা অদ্ভুতভাবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল, যেন কোনো কিছু বলতে চাইছে। ভয় পেয়ে কাকা রাস্তা থেকে একটা কাঠ তুলে সাপটাকে ছুঁড়ে মারেন। সাপটার একটা কান্নার মত আওয়াজ করে ঝোপের ভেতরে মিলিয়ে যায়।
সেই রাতে হোস্টেলে ফিরে এসে, হালকা জ্বর নিয়ে শুয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক দুইটা বাজে। ঘুম ভেঙে যায় প্রস্রাবের চাপে। টয়লেটে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসেন। কিন্তু হঠাৎই টের পান—তিনি একা নন সেখানে। চারদিকে তাকাতে থাকেন। ঠিক তখনই তার চোখ পড়ে টয়লেটের উপর। ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটি বিভৎস মুখ। পুরো মাথাটাই যেন কেটে ফেলা হয়েছে—চুল টেনে টেনে ফ্লোরে পড়ে আছে। লালচে চোখ যেন যেকোনো সময় রক্তে ভরে যাবে। সেই মাথা রহিম কাকার চোখে চোখ রেখে বলল, “তুই আমার শান্তি নষ্ট করছিস। তোকে ছাড়ব না!”
এই দৃশ্য দেখে তিনি চিৎকার করে ওঠেন। অন্য ছাত্ররা ও হুজুর ছুটে আসেন। রহিম কাকা তখন এতটাই আতঙ্কে ছিলেন যে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। পরে সবাইকে বিস্তারিত বলেন—সাপ, শ্মশান, সেই ভয়ানক মাথা সব কিছু।
হুজুররা সঙ্গে সঙ্গে এক হুজুরের তাবিজ পরিয়ে দেন। এরপর থেকেই রহিম কাকার পড়াশোনার আগ্রহ কমে যায়। হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে যান।
বছর চারেক পর। রহিম কাকার বিয়ে ঠিক হয় পাশের গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে। পাকা কথা হয়ে গেছে, দিন-তারিখও ঠিক। বিয়ের বাজার করতে তিনি শহরে যান, চট্টগ্রাম নগরীতে। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। ফেরার পথে রাত হয়ে যায়। সড়ক ছিল কাদায় ভরা, এক পাশে বয়ে যাওয়া খালের পাশে দিয়ে যেতে হচ্ছিল।
হঠাৎ তিনি দেখতে পান, সাদা শাড়ি পরা এক মহিলা দূর থেকে হেঁটে আসছেন। ভেজা কাপড়ে তার শরীরের গড়ন স্পষ্ট, কিন্তু মুখটা... মুখটা যেন কোনোভাবে বিকৃত! যখন মহিলাটি তার খুব কাছে আসেন, তখন মুখটা খুলে হাসেন। সেই হাসির শব্দ কাকার বুক কাঁপিয়ে দেয়।
তিনি ভয় পেয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে মহিলাটিকে অতিক্রম করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই মহিলাটি বলে ওঠে, “ভেবেছিস, আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবি?
এই কথা শুনেই রহিম কাকার গলা আটকে যায়, কিছু বলতে পারেন না, পা কাঁপতে থাকে। হঠাৎই মনে হয়, কেউ যেন তার গলা টিপে ধরেছে। নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না তিনি। কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
সেই রাতেই রহিম কাকা নিখোঁজ হন। পরদিন বাজারের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায় খালের পাশে, কিন্তু তাঁর কোনো খোঁজ মেলেনি। পরিবার খোঁজাখুঁজি করতে করতে একেবারে দিশেহারা হয়ে যায়। থানায় খবর দেওয়া হয়, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও ছাপা হয়।
তিন সপ্তাহ পর, এক রাতে বাড়ির দরজায় ধাক্কার শব্দ হয়। সবাই ঘুমিয়ে ছিল। দরজা খুলে দেখে—রহিম কাকা! তার শরীর ভেজা, কাদায় ভর্তি, চোখ দুটো যেন অন্যমাত্রায় কাঁদা। দরজার সামনেই পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
পরে জ্ঞান ফিরলে পরিবারের সবাই জানতে চায় কী হয়েছিল। রহিম কাকা শুধু বলেন, “আমি ফিরে আসিনি, আমাকে কেউ ছেড়ে দিয়েছে।” এরপর আর কিছু বলেননি। আর কেউ তাকে জিজ্ঞেস করেওনি।
আবারও বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। নতুন করে মেয়ে দেখা হয়, পছন্দও হয়। বিয়ের দিন নির্ধারিত হয় বর্ষার শেষ রাতে।
