স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান: সা¤প্রদায়িক শক্তিগুলো নজরদারিতে
ঢাকা অফিস : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ ও ভুটানের সাবেক (চতুর্থ) রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুকসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিদের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে বিদেশি অতিথিরা ঢাকায় আসতে শুরু করবেন। ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও অতিথিরা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অনুষ্ঠানেগুলো নির্বিঘ্নে উদযাপনের জন্য রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে নিরাপত্তা বলয় তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এ নিয়ে একাধিকবার নিজেদের মধ্যে এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে একটি ছক তৈরি করেছে। এবার হেফাজতের পক্ষ থেকে কোনও অতিথিকে নিয়ে ‘আপত্তি’ জানানো হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, হেফাজত এবার সক্রিয় হবে না। তারপরও উগ্র ও সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। রবিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ডিএমপি সদর দফতরে বিশেষ সভা হয়। সভায় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। এতে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, র্যাব ও পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভা সূত্রে জানা গেছে, এবারের অনুষ্ঠানকে ঘিরে কোনও নিরাপত্তা হুমকি নেই। অতিথিদের উড়োজাহাজ থেকে নামার পর থেকে হোটেলেও বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। গত বছর ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর ও পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে হেফাজতের সহিংসতা ও নাশকতার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারের নিরাপত্তার ছক তৈরি করা হয়েছে। তবে হেফাজত বিভিন্ন দলে বিভক্ত হওয়ায় এবং শীর্ষ কয়েকজন নেতা কারাগারে থাকায় বর্তমানে সংগঠনটি প্রায় নিস্ক্রিয়। সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যাতে কোনও ষড়যন্ত্র না করতে পারে, সেজন্য সভা থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সমন্বিতভাবে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনীর কথা বলা হয়েছে। সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানস্থল ও উদ্যাপন এলাকাসহ এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনও যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না। অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের অনুমোদিত গাড়ি চলবে। এ ছাড়া অনুষ্ঠান চলাকালে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভাসমান দোকান ও সরকারি নির্মাণকাজও বন্ধ থাকবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান একেএম হাফিজ আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। বিভিন্ন দেশের অতিথিদের নিরাপত্তায় আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে সদস্যরা এখনই কাজ করছেন।’ উদযাপনকে ঘিরে কোনও উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির এখনও কোনও ষড়যন্ত্র বা অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা হেফাজতসহ বিভিন্ন গ্রুপকে নজরদারিতে রেখেছি। তবে আমাদের নজরে এখনও তেমন কিছু পড়েনি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ শুরু হয়েছে। অতিথিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সময় মোদির সফরের বিরোধিতায় হেফাজতসহ ইসলামিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠন ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক সহিংস বিক্ষোভ করে। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়েছিল সেই সহিংসতা। মামলা হয়েছিল ১৫৪টি। প্রায় ৯ মাস কেটে গেলেও শেষ হয়নি কোনও মামলার তদন্ত। ওই ঘটনায় সারাদেশে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিল পাঁচশ’রও বেশি। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় প্রায় ১৩শ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের অর্ধেকেরও বেশি জামিনে বের হয়ে এসেছে।