এখনো নানার জন্য মন কাঁদে নাতির
***********************************************************************
নিজেদের নাম ছাপিয়ে দর্শকদের কাছে তাঁরা নানা-নাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। অভিনয় থেকেই নানা অমল বোস ও নাতি নিপুর বোঝাপড়া, পারস্পরিক সম্পর্ক গড়িয়েছিল পরিবারের মতো। একজনকে ছাড়া যেন অন্যজন অসম্পূর্ণ। যেখানেই যেতেন দর্শকদের ভালোবাসা পেতেন নানা-নাতি। সেই জনপ্রিয় জুটি ভেঙে যায় ২০১২ সালে আজকের দিনে। ২৩ জানুয়ারি মারা যান অমল বোস। নানাকে ছাড়া কেমন আছেন নাতি?

অমল বোসের প্রয়াণ দিবসে আজ তাঁকে স্মরণ করলেন নিপু। প্রথম আলোকে বললেন, ‘এ দিনটির কথা কখনোই ভুলবেন না। এই দিনেই আমি নানাকে হারিয়ে একা হয়েছি।

আমাদের জনপ্রিয় জুটি ভেঙেছে।’ নিপু আরও বলেন, ‘প্রতিটা মুহূর্তে নানাকে আমি মিস করি। যেখানেই যাই, দর্শক এখনো বলেন, ওই যে নানার নাতি যায়। তখন মনে হয়, নানা আমার সঙ্গে আছেন। একসঙ্গে অভিনয় করে এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আর হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। আমি আর দাদা ছিলাম মানিকজোড়। দর্শক আমাদের নানা-নাতি হিসেবে চিনলেও আমি অমল দা-কে সব সময় দাদা বলতাম।’

প্রায় দুই যুগ আগে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ দিয়েই তাঁদের পরিচয়। নিপু বলেন, ‘১৯৯৫ সালের শুরুর দিকে হবে সম্ভবত, আমরা নানা-নাতির চরিত্রে অভিনয় করি। তখন আমি কিছুই জানতাম না। কিন্তু অমল দা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিতেন। কীভাবে কথা বলতে হয়, অভিনয় করতে হয়। কীভাবে মাইক্রোফোন ধরতে হয়। তখন বুঝতাম, মানুষটা ভালো অভিনেতাই নন, ভালো একজন মানুষও। তার পর থেকে সখ্য বাড়তে থাকে। একসঙ্গে আড্ডা দিতাম, ছুটে চলতাম দেশের আনাচকানাচে। তাঁর মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমরা অভিনয় করেছি। মাঝে ইত্যাদির অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনার জন্য আমরা একসঙ্গে অন্যভাবে পর্দায় আসতাম, সেটা খুবই কম। এগুলো দর্শক মনে রাখতেন। পরে বুঝতাম, দর্শক নানা-নাতিকে মিস করেন।’

ইত্যাদিতে অভিনয় করে আলোচিত হন অমল বোস ও নিপু। তাঁদের জনপ্রিয়তার কারণে নানা-নাতিকে ছুটতে হতো দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠান করতে। ভক্তরা কাছে পেয়ে ঝাঁপিয়ে পরতেন। সেগুলো এখনো নিপুর কাছে স্মরণীয় ঘটনা। নিপু বলেন, ‘এখনো নানার জন্য মন কাঁদে। এখনো গভীর রাতে নানাকে মনে পড়ে। নানাকে দেখতে ইচ্ছা হয়। তখন আমাদের একসঙ্গে অভিনয় করা ইত্যাদির পর্বগুলো দেখি। মনে হয়, এখনো নানা বেঁচে আছেন, এখনো পেছন থেকে ‘নিপু’ বলে ডাক দেবেন। আমাকে অভিনয় শেখাবেন।

আমাকে বলতেন, “দর্শকেরাই শিল্পীর প্রাণ। তাঁদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবি।” এমনকি জীবন কীভাবে চালিয়ে যেতে হবে, সেটাও শেখাতেন। আমল দার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’

জীবদ্দশায় অমল বোসের পরিবারের সঙ্গেও খুব ভালো সম্পর্ক ছিল নিপুর। ফুরসত পেলেই ছুটে যেতেন নানাবাড়িতে। নিপুর ভাষ্যে, ‘নানার বাড়ির অন্যান্য নাতি-নাতনিরাও আমাকে খাতির করতেন। কিন্তু নানা মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র মেয়ে সেই আগের বাসায় থাকেন না। কোথায় থাকেন, খোঁজার চেষ্টা করেছি, কিন্তু খুঁজে পাইনি। কারও ফোন নম্বরও নেই। এখনো ইচ্ছা করে নানার পরিবারের অন্যদের সঙ্গে দেখা করি। তাঁদের মিস করি।’

নানাকে নিয়ে একটি আক্ষেপ এখনো পোড়ায় নিপুকে। তিনি জানান, নানা মাছ খেতে চেয়েছিলেন। পরে মাছ খাওয়াতে পারেননি। তবে পছন্দের ফলমূল খাওয়াতেন।
জনপ্রিয় অভিনেতা অমল বোসের জন্ম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারীতে। ষাটের দশক থেকে তিনি মঞ্চনাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে পা রাখেন। অবসর, শৈবাল, রংধনু নাটকের দলগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সময় তাঁর অভিনয় শুরু হয় পাড়ার যাত্রাদলের মঞ্চনাটক দিয়ে। এভাবেই তিনি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মঞ্চে অভিনয় করে পরিচিত হয়ে উঠতে থাকেন।

১৯৬৬ সালে ‘রাজা সন্ন্যাসী’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় নাম লেখান অমল বোস। নীল আকাশের নিচে, অবিচার, হঠাৎ বৃষ্টি, আমি সেই মেয়ে, তোমাকে চাই, মন মানে না, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদসহ অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁকে কখনো দেখা যেত খল চরিত্রে, কখনো বাবা, পুলিশসহ সব চরিত্রেই তাঁর অভিনয় ছিল মনে রাখার মতো।

Source: প্রথম আলো

image