আল্লাহর ইবাদতের প্রতিদান - জিবন বদলে দেয়া এক অগ্নিপূজকের কাহিনী

আল্লাহর ইবাদতের প্রতিদান | জীবন বদলে দেয়া এক অগ্নিপূজকের কাহিনী | theislamiccommunication.xyz

মালিক ইবনে দিনার (রহ) এর যুগে দুই অগ্নিপূজক ভাই ছিল । যারা আগুনকে প্রভু মানত এবং আগুন পূজা করতো । একদিন ছোট ভাই বড় ভাইকে বললো, তুমি তো তিহাত্তর (73) বছর ধরে আগুন পূজা করে আসছো এবং আমি পয়ত্রিশ (35) বছর ধরে আগুন পূজা করছি ।

তো চলো এবার আমরা পরিক্ষা করবো, আমরা যে এত বছর ধরে আগুন পূজা করে আসতেছি আমাদের কোন উপকার হলো কি না, তা আমরা পরিক্ষা করবো । 

অতএব আমরা এখন দেখবো যে, অন্যদের মতো যারা আগুন পূজা করে না আমাদেরকেও কি জ্বালিয়ে দেয় কিনা । যদি অন্যদের মত আমদেরকেও জ্বালিয়ে দেয়, তবে আমরা আর আগুন পূজা করবো না ; আর যদি আমাদেরকে অন্যদের মতো না জ্বালায়, তবে আমরা তাঁর পূঁজা করবো । 

তারপর তার বড় ভাই বললো ঠিক আছে  । অতঃপর তারা উভয়ে মিলে আগুন প্রজ্বলিত করলো । তারপর ছোট ভাই বড় ভাইকে বললো, প্রথমে আপনি হাত রাখবেন না আমি রাখব ?  বড় ভাই বললো তুমি আগে রাখো । 

তখন ছোট ভাই তার হাত আগুনের মধ্যে রাখা মাত্রই তার হাত জ্বলে যেতে লাগলো ।  তখন সে তার হাত তাড়াতাড়ি করে আগুন থেকে সরিয়ে নিল এবং আফসুসের সাথে বললো, আমি এত বছর ধরে তোমার পূঁজা করে আসছি আর সেই তুমি আমাকে কষ্ট দিচ্ছো ।

তারপর সে তার বড় ভাইকে বললো, চলো আমরা এমন সত্যার পূজা-ইবাদত করবো ; যদি আমরা প্রচুর পরিমানে পাপ ও ‍পাঁচশত বছর ধরেও যদি তাকে স্বরণ না করি, আমাদের এক মুহূর্ত ও একবার ইস্তেগফার করার দ্বারা আমাদেরকে মাফ করে দিবেন।  

তারপর ছোট ভাইয়ের প্রস্তাবে বড় ভাই রাজি হলো এবং বললো আমরা এমন কোন ব্যাক্তির কাছে যাবো যিনি আমাদেরকে সঠিক পথ দেখাবেন । অতঃপর তারা উভয়ে একমত হল যে, তারা মালিক ইবনে দিনার (রহ) এর কাছে যাবে।

তখন তারা মালিক ইবনে দিনার (রহঃ) কে বসরাহ শহরের একটি গ্রামে দেখতে পেল, তখন মালিক ইবনে দিনার (রহঃ) সাধারণ মানুষদেরকে নিয়ে ইসলাম ধর্মের সত্যতা সম্পর্কে আলোচনা করছিল এবং তাদেরকে উপদেশ দিচ্ছিল । 

যখন তারা মালিক ইবনে দিনার এর নিকটবর্তি হয়ে গেল, তখন বড় ভাই বলে উঠলো, আমার অনেক বছর চলে গেছে অগ্নি পূজাতে যদি আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি, তাহলে আমার পরিবার ও প্রতিবেশিরা দিক্ষা দিবে ও অপদস্থ করবে । আর আমার কাছে প্রতিবেশির লাঞ্ছনা থেকে জাহান্নামের আগুন অনেক ভালো ।

তখন ছোট ভাই বললো, হে ভাই তুমি এরকমটা করো না ; তাদের লাঞ্ছনা কিছু সময়ের জন্য কয়েকদিন পরে দূর হয়ে যাবে, কিন্তু জাহান্নামের আগুন চিরকালের জন্য কখনো দূর হবে না । কিন্তু বড় ভাই ছোট ভাইয়ের কথা না শুনে সেখান থেকে চলে এলো ।

আর ছোট ভাই তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মালিক ইবনে দিনার (রহ) এর কাছে গিয়ে বসলো, যখন মালিক ইবনে দিনার (রহঃ) তার মজলীস থেকে ফারেগ হয়ে গেল, তখন যুবকটি তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো এবং বললো আমাকে, আমার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে মুসলমান বানিয়ে দেন ।

তারপর যুবক ইসলাম গ্রহণের পর তার পরিবার নিয়ে চলে আসার সময় মালিক ইবনে দিনার (রহ) যুবকের সহযোগিতার জন্য সে ও তার সাথীদের থেকে কিছু টাকা-পয়সা খাবার-দাবার দিতে চাইলে তিনি গ্রহণ করলেন না ।

অতঃপর যুবক তার পরিবার নিয়ে এক নির্জন-নিস্তব্ধ জায়গায় চলে গেল এবং সেখানে গিয়ে একটি আবাদকৃত ঘর পেল । তারপর যুবক ও তার পরিবার সহ সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিল । যখন সকাল হল তার স্ত্রী তাকে বললো কোন কাজ খোজার জন্য এবং কাজের টাকা দিয়ে খাবার-দাবার ক্রয়ের জন্য ।

তখন সে তার স্ত্রীর কথামত বাজারে গেল, কিন্তু তাকে কেউ কোন কাজে নিল না। তখন সে মনে মনে বললো আমি আল্লাহর জন্য কাজ করবো । অতঃপর সে আল্লাহর ইবাদতের জন্য একটা নির্জন জায়গা বেছে নিল এবং সে সেখানে মাগরিব পর্যন্ত (সূর্য অস্ত যাওয়া পর্জন্ত) নামাজ (নফল নামাজ)  আদায় করলো । তারপর সে খালি হতে বাড়ি ফিরে গেল ।

যুবকটি বাড়িতে আসলে তার স্ত্রী  জিজ্ঞাসা করলো বাজার থেকে খাওয়ার  জন্য কিছু এনেছে কি না ? সে উত্তরে বললো আজকে আমি যে মালিকের কাজ করেছি, সে বলেছে আগামিকাল টাকা দিবে । অতএব তারা সে রাত্রে অনাহারে থাকলো ।

পরের দিন যখন সকাল হল যুবকটি পুনরায় বাজারে গেল, কিন্তু তাকে আজকেও কেউ কজে নিল না । তারপর যুবকটি গতকালের মত সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে কাটালো এবং সন্ধা বেলায় খালি হাতে বাড়ি ফিরলো । তার স্ত্রীকে বললো যার কাজ করেছি সে ওয়াদা করেছে জুমু’আর দিন দিবে । জুমু’আর দিন যখন সকাল হল সে পুনরায় বাজারে গেল, কিন্তু জুমু’আর দিনও কোন কাজ পেল না । 

যখন অর্ধেক দিন কেটে গেল তখন যুবকটি দুই রাকাত নামাজ পড়ে তার দুই হাত আকাশের দিকে উত্তোলন করলো এবং বললো, হে আমার প্রতিপালক ! আপনি আমাকে ইসলামের দ্বারা সম্মানিত করেছেন এবং হিদায়াতের মুকুঁট পড়িয়েছেন, অতএব আপনি এই সম্মানিত ধর্মের উসিলায় এবং আজকের এই পবিত্র জুমু’আর দিনের উসিলায় আমার অন্তর থেকে পরিবারের খরচ বহনের চিন্তা দূর করে দেন । 

আমার লজ্জা হয় পরিবারের খরচ বহন করতে না পারায় । আমি তাদের উপর ভয় করছি ইসলামে নতুন অবস্থায় তাদের পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার প্রতি । যখন জুমু’আর নামাজের সময় হলো, তখন যুবকটি একটি জুমা মসজিদে নামাজের জন্য গেল । এদিকে তার সন্তানরা ক্ষুদার তারণায় কষ্ট করছে । 

তখন আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি তার রহমতের দরজা খুলে দিলেন । আল্লাহ তাআলা তার পক্ষ থেকে ফেরেশতা পাঠালেন । সে ফেরেশতা মানুষ রূপে যুবকটির বাড়িতে গেলেন এবং দরজায় আওয়াজ করলেন । তখন যুবকটির স্ত্রী দরজা খুলে দেখলেন এক সুশ্রী-সুন্দর যুবক দাড়িয়ে আছে । তার হাতে ছিল স্বর্ণের একটি থালা যা স্বর্ণের রুমাল দিয়ে পেঁচানো আছে । 

তখন যুবকটি (ফেরেশতা) তাকে বললো, এটা নাও এবং তোমার স্বামী আসলে তাকে বলবে এটা হচ্ছে তোমার দুই দিনের আল্লাহর  কাজের প্রতিদান, তুমি যদি বেশি কাজ করতে তাহলে আরো বেশি দিতাম ।

তারপর যুবকটির স্ত্রী থালাটা নিল এবং সেখানে এক হাজার দিনার পেল । সে সেখান থেকে একটি দিনার নিয়ে স্বর্ণকারের কাছে গেল । সে স্বর্ণকার ছিল নাসারা । স্বর্ণকার দিনারটি ওজন করলো, এক মিছক্বাল বা দুই মিছক্বাল হলো ।

নাসারা স্বর্ণকার ভালো করে দিনারের দিকে দেখলো এবং বললো এটা কোন দুনিয়ার স্বর্ণ নয় । তারপর সে যুবকটির স্ত্রীকে  জিজ্ঞাসা করলো এই দিনার তুমি কোথায় পেয়েছো ? এ দিনার তুমি কোন জায়গায় পেয়েছো ?

তারপর যুবকটির স্ত্রী তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো । স্বর্ণকার তার ঘটনা শুনে বললো আমাকে মুসলমান বানিয়ে দাও । তারপর যুবকটির স্ত্রী নাসারা স্বর্ণকারকে কালিমা পড়িয়ে মুসলমান বানিয়ে দিল ।

তারপর স্বর্ণকার তাকে এক হাজার দিরহাম দিয়ে বললো তুমি এটা খরচ করো এবং যখন শেষ হয়ে যাবে আমাকে জানাবে । অতঃপর যুবকটির স্ত্রী দিরহাম নিয়ে চলে এলো এবং তা দিয়ে সে ঘরের জিনিস-পত্র ও খাবার-দাবার ক্রয় করলো ।

এদিকে তার স্বামী  মাগরিবের নামাজ আদায় করার পরে সন্ধা বেলায় যখন খালি হাতে বাড়ি ফিরার চিন্তা করলো, তখন সে তার রুমাল মাটিতে বিছিয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলো এবং রুমালে মাটি ভরে নিল । 

এবং মনে মনে বললো যখন স্ত্রী  জিজ্ঞাসা  করবে, বলবো এর মধ্যে আটা আছে যা আমি রোজগারের টাকা দিয়ে এনেছি । তারপর সে তার ঘরের দিকে রওয়ানা হয়ে গেল এবং যখন ঘরে প্রবেশ করতে দরজার সামনে গেল দেখতে পেল তার ঘরে সজ্জিত বিছানা ও সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ ।

এসব দেখে যুবকটি তখন তার হাতে থাকা মাটিতে ভরতি রুমালটি দরজার কাছে রেখে দিল যাতে করে তার স্ত্রী বুঝতে না পারে । তারপর সে ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলো তুমি এত কিছু কোথায় পেয়েছো ।

তারপর তার স্ত্রী তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো । স্ত্রীর মুখ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনার পর যুবকটি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে সেজদায় লুটিয়ে পড়লো ।

তারপর তার স্ত্রী তাকে জিজ্ঞাসা করলো আপনার হাতের রুমালে কি ছিল ? যুবকটি উত্তরে বললো তুমি এটার ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে । তারপর রুমালের কাছে গিয়ে তার ভিতরে থাকা মাটি ফেলে দিতে চাইলে দেখতে পেল আল্লাহর আদেশে মাটি আটাতে পরিণত হয়ে গেছে । 

তারপর যুবকটি এ দৃশ্য দেখে পুনরায় আল্লাহর শুকরিয়া করতে সেজদায় লুটিয়ে পড়লো ।  যুবকটি তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত  আল্লাহর ইবাদতে তার জিবন কাটিয়ে দিল ।

ঘটনাটি থেকে আমরা শিখতে পেলাম আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরষা থাকলে নিশ্চয় আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করবেন । আর যারা বুঝতে পেরেছেন ইসলাম ধর্মই হচ্ছে সত্য ধর্ম, ইসলাম ধর্মই হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ তাআলার মনোনিত ধর্ম । অতএব আর দেরি না করে, পরিবার-প্রতিবেশি কি বলবে তার দিকে না তাকিয়ে, একমাত্র নিজের কথা, নিজের আখেরাতের শান্তির কথা ভেবে  ইসলামে প্রবেশ করুন । কারণ আখেরাতের দিনে আপনার পরিবার-প্রতিবেশি আপনাকে বিন্দু পরিমানও সহযোগিতা করবে না ।

Also Read   

       বিসমিল্লাহর অলৌকিক গুণ,             বিসমিল্লাহর বরকত 

      এতিম শিশুর প্রতি মুহাম্মদ (সাঃ)        এর দয়া

      বনি ইসরাইলের প্রতি আল্লাহ              তাআলার গরু জবাইয়ের                    আদেশ 

     বনি ঈসরাঈল এর এক মহিলার         সাত দিনের জন্য কবরে অবস্থান 

 


Md Shorirul Islam

5 وبلاگ نوشته ها

نظرات