Opekkha : অপেক্ষা
Opekkha : অপেক্ষা

Opekkha : অপেক্ষা

@opekkha

image

image

image

image

আমরা জানি, পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘন্টায় একবার নিজ অক্ষে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে, যার ফলে দিন ও রাতের আবর্তন ঘটে। কিন্তু বাস্তবে এই ঘূর্ণন ঠিক ৮৬,৪০০ সেকেন্ডে হয় না—মাঝে মাঝে কয়েক মিলিসেকেন্ড কম বেশি হয়।

ডায়নোসরদের আমলে দিন ছিল ২৩ ঘণ্টার আর ব্রোঞ্জ যুগে গড়ে ০.৪৭ সেকেন্ড কম। ২০ কোটি বছর পর দিন হবে ২৫ ঘণ্টার! দিনের দৈর্ঘ্যের এই পার্থক্য প্রতিদিনই ছোটখাটো ওঠানামা হয়। তবে এটি বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ভুলভাবে বোঝা সম্ভব হয় অ্যাটোমিক ক্লক আবিষ্কারের পর থেকে।

বলাবাহুল্য যে, অ্যাটোমিক ক্লক আবিষ্কারের পর দেখা যায়, পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমছে, ফলে পারমাণবিক সময় এবং সার্বজনীন সময়ের মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয়। এই ব্যবধান ঠিক করতে ১৯৭২ সাল থেকে মাঝে মাঝে Leap Second (অতিরিক্ত এক সেকেন্ড) যোগ করতে হয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ২৭ বার লিপ সেকেন্ড যোগ করা হয়েছে।

কিন্তু ২০১৬ সালের পর পৃথিবীর গতি কমার ধারা থেমে যায়। এবং ২০২০ সালের পর থেকে ঘূর্ণন গতি হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। এমনকি আধুনিক অ্যাটমিক ক্লক ব্যবহারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ জুলাই ছিল সবচেয়ে ছোট দিন—পৃথিবী সেদিন ১.৬৬ মিলিসেকেন্ড আগে ঘূর্ণন সম্পন্ন করেছিল।

গবেষকদের ধারণা, ২০২৫ সালের ৯ জুলাই, ২২ জুলাই এবং ৫ আগস্ট হতে পারে সবচেয়ে ছোট তিনটি দিন। এ সময় পৃথিবী যথাক্রমে ১.৩১, ১.৩৮ এবং ১.৫১ মিলিসেকেন্ড আগেই ঘূর্ণন শেষ করতে পারে। এই ধারা চলতে থাকলে, ২০২৯ সালে প্রথমবারের মতো Negative Leap Second (এক সেকেন্ড বাদ দেওয়া) লাগতে পারে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায় হঠাৎ গতি বৃদ্ধির কারণ কী? পূর্বের যেসব মডেলে পৃথিবীর গতি হ্রাস ব্যাখ্যা করা যেত যেমন, চাঁদের মধ্যাকর্ষণ, আবহাওয়ার পরিবর্তন, বা ভূগর্ভের গঠন—তা দিয়ে এই গতি বৃদ্ধি পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। তাই বিষয়টি এখনো অজানাই রয়ে গেছে।

যদিও এই পরিবর্তন মিলিসেকেন্ড মাত্রায়, তবুও GPS, স্যাটেলাইট, স্টক এক্সচেঞ্জ বা ইন্টারনেট টাইমিংয়ের মতো ক্ষেত্রে তা বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এসব ক্ষেত্রে সময়ের প্রতি ন্যানোসেকেন্ড ব্যবধানই বড় পার্থক্য তৈরি করতে পারে।

তাহলে কি পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি আরও বাড়বে? উত্তর হলো সম্ভবত না। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ২০৩৫ সালের পর পৃথিবী আবার ধীর গতিতে ফিরবে এবং ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। মেরু অঞ্চলে বরফ গলার মতো প্রাকৃতিক কারণ সেই ধীরগতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।

অর্থাৎ পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমা-বারা দুই-ই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে, পরিবর্তনই একমাত্র ধ্রুব সত্য।

image