পরিদর্শনে দুদকের তদন্ত দল, পিচ-পাথরের নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত
***********************************************************************
ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের বেহাল অবস্থা দেখতে ও সংস্কারকাজে দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে পরিদর্শন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত ঝিনাইদহ জেলা কার্যালয়ের একটি তদন্ত দল। গতকাল বুধবার দুপুরে দলটি মহাসড়কটি পরিদশর্ন করে। তদন্ত দলটির সদস্যরা ঝিনাইদহের অংশসহ অন্তত ২০ কিলোমিটার ঘুরে দেখেন। সেই সঙ্গে পিচ-পাথরের নমুনা পরীক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

দলটির নেতৃত্বে ছিলেন কার্যালয়টির সহকারী পরিচালক ও তদন্ত দলের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। তদন্ত দলটির সদস্যরা জানান, প্রথম আলো পত্রিকার খবরের পর প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে দুদকের দলটি গতকালই তদন্তে নামে। তবে এদিন ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় নির্বাচন থাকায় সরকারি সব অফিস বন্ধ ছিল। এ কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাউকে তাঁরা পাননি। তবে তাঁদের কাছে সড়ক সংস্কারকাজের সব কাগজপত্র চাওয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত (ড্যামেজ) স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের পর দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে তাঁদের চিঠি পাঠানো হয়। দ্রুত তদন্ত করার জন্য নির্দেশ পেয়ে তাঁরা বুধবারই মহাসড়কটি ঘুরে ঘুরে দেখেন। মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো দেখতে যান।

মহাসড়কটির ঝিনাইদহ অংশের তেঁতুলতলায় মাটি খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে মেরামতকাজ করতে দেখেন। মহাসড়কের অন্যান্য জায়গা দু–এক দিনের মধ্যে ঠিক করা হয়েছে। তাঁরা যেটা দেখেছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, নিম্নমানের বিটুমিনের ব্যবহারের কারণেই মহাসড়কের বেশ কিছু স্থানে পিচ-পাথর জমাট বেঁধে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এতে যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, তদন্তকালে তাঁরা এলাকাবাসীর বক্তব্য শোনেন। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ঝিনাইদহ অংশের বিভিন্ন স্থানে উঁচু ঢিবি আর গর্ত তৈরি হয়েছিল। পাশ থেকে দেখতে ঢেউখেলানো মনে হতো। উঁচু ঢিবিগুলো দেখতে অনেকটা সড়ক বিভাজনের মতো ছিল। জাতীয় এই মহাসড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের মনে হয়েছে সংস্কারকাজে অনিয়ম–দুর্নীতি হতে পারে। তাই তাঁরা সড়কের পিচ-পাথরের নমুনা ল্যাব পরীক্ষার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

এদিকে গত কয়েক দিন থেকে মহাসড়কের উঁচু ঢিবিগুলো মাটি খননযন্ত্র দিয়ে কেটে দেওয়ার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে উঁচু ঢিবি কাটাও হয়েছে, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। দু–চার দিন যেতে না যেতেই আবার আগের মতো গর্ত তৈরি হচ্ছে।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহ অংশের ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল থেকে কালীগঞ্জের নিমতলা পর্যন্ত একাধিক স্থানে পিচ-পাথর জমাট বেঁধে উঁচু ঢিবিতে পরিণত হয়েছিল। মহাসড়কটি সংস্কারের ৬ মাস যেতে না যেতেই মাঝেমধ্যে এ অবস্থা তৈরি হচ্ছিল। স্থানীয় সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে যা মাটি খননযন্ত্র দিয়ে কাটা হতো, কিন্তু কাটার দুই থেকে চার দিন যেতে না যেতেই আবার একই অবস্থা তৈরি হতো। দুই সপ্তাহ আগে থেকে সড়কের ঝিনাইদহ সদর উপজেলা অংশের বাইপাস রোড, চুটলিয়া, তেঁতুলতলা, বিষয়খালী, কয়ারগাছি, কালীগঞ্জ উপজেলা অংশের খয়েরতলা, কলেজ মোড় ও নিমতলা এলাকায় খুবই খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ৭ মে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরের দিন দুদকের পক্ষ থেকে মহাসড়কটির অবস্থা তদন্ত করে দেখা হয়।

source : প্রথম আলো।

image