বিশ্বের প্রথম সামরিক সাবমেরিন দেখুন ইতিহাস
১৭২১ সাল। রাশিয়ার এক ছুতার, ইয়েফিম নিকোনভ, তার হাতে কাঠের টুকরো আর মাথায় বিপ্লবী এক ধারণা নিয়ে হাজির হলেন পিটার দ্য গ্রেটের দরবারে। যুদ্ধ তখন শুধুই স্থল ও জলপৃষ্ঠে সীমাবদ্ধ। কিন্তু নিকোনভের কল্পনা ছুটে গিয়েছিল সমুদ্রের গভীরে—সেখানে, যেখানে শত্রু কখনো কল্পনাও করেনি আক্রমণের।
নিকোনভের নকশা ছিল এক অদ্ভুত কাঠের ব্যারেল, দেখতে অনেকটা দৈত্যাকার সাকো বা কসাইয়ের কড়াইয়ের মতো, যার পেটে ছিল আগুন ছুঁড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা—এক ধরনের আদিম ফ্লেমথ্রোয়ার। এর সঙ্গে ছিল পানির নিচে ঢুকতে ও বের হতে একটি এয়ারলক, যেন জলের নিচে গিয়ে শত্রুর জাহাজে চুপিচুপি বিস্ফোরণ ঘটানো যায়।
পিটার দ্য গ্রেট তো মুগ্ধ! তিনি অনুমোদন দিলেন, তহবিল দিলেন, নির্মাণও শুরু হলো। ১৭২৪ সালে এল সেই প্রতীক্ষিত মুহূর্ত—পরীক্ষামূলক ডাইভ। কিন্তু প্রকৃতি ছিল নির্মম। ব্যারেল-আকৃতির সেই সাবমেরিন ডুবে গেল। নিকোনভ ও তার সঙ্গীরা প্রাণে বাঁচলেও, স্বপ্নটা পানিতে তলিয়ে গেল।
নিকোনভ থেমে যাননি। তিনি আরও নকশা তৈরি করেন, আরও চেষ্টা চালান। কিন্তু ১৭২৫ সালে পিটার মারা গেলে সব বদলে যায়। নতুন সরকার আর আগ্রহ দেখায় না। বরং নিকোনভের বিরুদ্ধে ওঠে তহবিল অপব্যবহারের অভিযোগ। ইতিহাসের পাতা থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যান এই দুর্ধর্ষ উদ্ভাবক।
তবু, ইতিহাস সব ভুলে না। যদিও নিকোনভের কাঠের সাবমেরিন সফল হয়নি, তার সাহসী চিন্তা এক নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দেয়। সেই দিগন্তেই ১৭৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধে ডেভিড বুশনেলের "টার্টল" প্রথম কার্যকর সাবমেরিন হিসেবে আবির্ভূত হয়।
নিকোনভের কাঠের ব্যারেল তাই কেবল একটি ব্যর্থতা নয়—এটি ছিল একটি সূত্রপাত, সমুদ্রের তলদেশে যুদ্ধের ইতিহাসে প্রথম অধ্যায়।
