বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান: বি-২ স্পিরিট

বিশ্ব রাজনীতির উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমান আজ আলোচনার কেন্দ্রে। এটি শুধু আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময় নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কৌশলের প্রতীকও বটে। আকাশপথে নিঃশব্দ ও প্রায় অদৃশ্য এই বিমান শত্রুর রাডার ফাঁকি দিয়ে নির্ভুল হামলা চালাতে সক্ষম।

নর্থরপ গ্রুম্যান নির্মিত এই বিমানটিতে রয়েছে উন্নত ‘স্টিলথ’ প্রযুক্তি, যা রাডার সিগন্যাল শোষণ বা প্রতিফলনের মাধ্যমে বিমানটিকে অদৃশ্য করে তোলে। বিশেষ নকশার কারণে এটি রাডারে ধরা পড়ে না বললেই চলে। বিমানটির পাখির আদলের গঠন, লেজবিহীন কাঠামো এবং মসৃণ পৃষ্ঠ একে রাডার প্রতিরোধী করে তুলেছে।

এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান হিসেবে পরিচিত। মাত্র ২১টি বি-২ বিমান রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে, যার প্রতিটির নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৫ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। শুধু নির্মাণ নয়, রক্ষণাবেক্ষণেও রয়েছে বিশাল খরচ; প্রতি ঘণ্টার উড্ডয়নে লাগে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার।

বিমানটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০১০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে এবং এটি চালাতে প্রয়োজন হয় মাত্র দুইজন পাইলটের। তবে এই বিমানে দায়িত্ব পালনের জন্য দীর্ঘ ও গোপন প্রশিক্ষণ নিতে হয়। বি-২ দীর্ঘ সময় আকাশে উড়তে সক্ষম, এমনকি উড়ন্ত অবস্থায় ট্যাংকার বিমানের মাধ্যমে জ্বালানি সংগ্রহ করেও মিশন চালিয়ে যেতে পারে। এটি ১৮ হাজার কেজি পর্যন্ত বোমা বহন করতে পারে, যার মধ্যে ১৬টি পারমাণবিক বোমা থাকতে পারে।

ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়ার মতো যুদ্ধক্ষেত্রে বি-২ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ করেছে—এই বিমান শুধু একটি যুদ্ধযন্ত্র নয়, বরং এক নিরব বার্তা, যা শত্রুর মনে ভয় জাগিয়ে তোলে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বি-২১ রাইডার নামে আরও উন্নত বোমারু বিমান তৈরির কাজ শুরু করলেও, এখনো পর্যন্ত বি-২ স্পিরিটই বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত, ভয়ংকর ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত।

image