আপনি কি জানেন ওঝা সাপের বিষ নামাতে পারে? জেনে নিন কিভাবে!

গ্রামবাংলায় একটি ব্যাপক প্রচলিত ধারণা হলো,সাপে কাটলে ওঝা ঝাড়ফুঁক করে রোগীকে সুস্থ করতে পারে। অনেকেই বলে থাকেন, ওঝার ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে বিষ নামানো সম্ভব এবং এমন বহু উদাহরণও রয়েছে যেখানে ওঝার কাছে গিয়ে রোগী সুস্থ হয়ে ফিরেছে। ফলে গ্রামাঞ্চলে আজও অনেক মানুষ সাপে কাটার পর সরাসরি হাসপাতালে না গিয়ে প্রথমে ছুটে যান ওঝার কাছে।

তবে, কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে-যদি ওঝা সত্যিই কার্যকর না হতো, তাহলে এই বিশ্বাস এতটা ব্যাপক হলো কীভাবে?
প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং উত্তর হলো--হ্যাঁ, অনেক সময় ওঝার কাছে গিয়ে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা।

বাংলাদেশে প্রায় ৮০টি সাপের প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২৮টি সাপ বিষধর।
তবে বিষধর হোক বা নির্বিষ,সব সাপই আত্মরক্ষার জন্য কামড় দিতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সাপ চেনেন না, ফলে কেউ সাপে কাটলে তারা বুঝতে পারেন না সেটা বিষাক্ত নাকি নির্বিষ। তখন প্রচলিত বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তারা রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে যান।আর এখানেই মূল বিষয়টি ঘটে।

ধরুন, কেউ নির্বিষ সাপের কামড় খেয়েছে। সেক্ষেত্রে তার শরীরে কোনো বিষ প্রবেশ করেনি। তাই এমনিতেই কিছুক্ষণ পর সে সুস্থ হয়ে উঠবে, চেতনায় বা শারীরিক যন্ত্রনায় তেমন কিছু ঘটবে না। কিন্তু রোগী যেহেতু ওঝার কাছে গিয়েছিল, লোকজন ধরে নেয় “ওঝার ঝাড়ফুঁকেই সে ভালো হয়েছে”।

এবার আসা যাক আরেক প্রশ্নে—যদি বিষধর সাপে কামড় দেয়, তবুও কিছু মানুষ ওঝার কাছে গিয়ে সুস্থ হয় কেন?
এর উত্তর হলো—ড্রাই বাইট (Dry Bite)।
বিশেষ করে বিষধর সাপ, গোখরা (Naja naja)
এই সাপ অনেক সময় আত্মরক্ষার জন্য কামড় দিলেও বিষ প্রয়োগ করে না। এটা ‘ড্রাই বাইট’ নামে পরিচিত। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, গোখরা প্রায় ৬০%-৭০% কামড় হয় ড্রাই বাইট।
যে রোগী এমন ড্রাই বাইটে আক্রান্ত হয়, তার শরীরে বিষ ঢোকে না,ফলে সে স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ হয়ে ওঠে। আর সমাজ ধরে নেয় ওঝার ঝাড়ফুঁকের ফলেই সে ভালো হয়েছে।

সত্যি বলতে, ওঝার ঝাড়ফুঁক বা মন্ত্রতন্ত্রে সাপে কাটার বিষ নামানো সম্ভব নয়।
বিষাক্ত সাপে কামড় দিলে একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা হলো হাসপাতালে গিয়ে সঠিক চিকিৎসা (Anti-venom) নেওয়া।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্বিষ সাপের কামড়, বা বিষধর সাপের ড্রাই বাইট, ওঝার ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে “সুস্থ হওয়ার” ভ্রান্ত ধারণাকে বাড়িয়ে তোলে।

পরামর্শ:
সাপে কাটলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে যান। মনে রাখবেন, জীবন রক্ষা করতে বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাই একমাত্র উপায়।

image
This page has been loaded 1744 times.