মৌচাকের ভেতরে মধু আর উষ্ণতার হাতছানি প্রায়শই ছোট্ট ইঁদুর, টিকটিকি এমনকি পাখিদেরও আকর্ষণ করে। খাদ্য ও আশ্রয়ের সন্ধানে তারা সাহস করে ভিতরে প্রবেশ করে—কিন্তু সেই সিদ্ধান্তই তাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়, ডেকে নিয়ে আসে মৃত্যু।
.
যখনই মৌমাছিরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথির উপস্থিতি টের পায়, তারা তাৎক্ষণিক এবং প্রবল আক্রমণ করে প্রাণীটিকে মেরে ফেলে। কিন্তু আসল সমস্যার শুরু হয় এখানেই: মৃত প্রাণীর দেহটি এতটাই বড় হয় যে মৌচাক থেকে এটিকে টেনে বের করা মৌমাছিদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
.
ফলে পচনশীল দেহ থেকে রোগ ও সংক্রমণ ছড়ানোর বিশাল ঝুঁকি তৈরি হয়।
আর ঠিক এই পরিস্থিতিতেই মৌমাছিরা তাদের জন্মগত, বিস্ময়কর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। তারা প্রকৃতি থেকে পাওয়া এক অনন্য উপাদান প্রপোলিস ব্যবহার করে মৃতদেহটাকে একদম সিল করে দেয়।
.
গাছের রজন ও মোম দিয়ে তৈরি এই বিশেষ আঠালো পদার্থটি হল:
• অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল: এটি ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ধ্বংস করে, ফলে পচন রোধ করে এবং সংক্রমণ ছড়াতে দেয় না।
• পানিরোধী ও সংরক্ষণকারী: এটি জল ও আর্দ্রতা প্রবেশ করতে দেয় না। এর ফলে মৃতদেহটি শুকিয়ে যায় এবং দীর্ঘদিন অক্ষত থাকে।
• একটি নিখুঁত প্রাকৃতিক সিল্যান্ট: এটি একটি নিখুঁত আঠালো সিলের মতো কাজ করে, যা মৃতদেহকে বায়ুরোধীভাবে মুড়ে দেয় এবং মৌচাকের পরিবেশ সুশৃঙ্খল রাখে।
.
মৌমাছিরা মৃতদেহকে এই প্রপোলিস দিয়ে সম্পূর্ণ মুড়ে ফেলে, তাকে পরিণত করে এক নিরাপদ, গন্ধহীন মমিকৃত বস্তুতে। ফলে মৌচাকের ভেতরের পরিবেশ থাকে সংক্রমণমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খল।
.
এটি কেবল কোনো যুক্তি বা চিন্তা নয়—এটি হলো এক স্বর্গীয় স্বভাব (Instinct), এক অদৃশ্য জ্ঞান যা এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলোকে তাদের বাসস্থান ও পবিত্রতা রক্ষায় পরিচালিত করে।
.
"অতএব, তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিআমতকে অস্বীকার করবে?" (সূরা আর-রহমান)। সত্যিই, মহান সেই সত্তা (আল্লাহ্) যিনি এই ক্ষুদ্রতম প্রাণীদেরও এমন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন যা তারা নিজে অর্জন করেনি। সমস্ত প্রশংসা ও মহিমা একমাত্র তাঁরই, যিনি এই জগৎকে এত চমৎকার নিয়মে পরিচালনা করেন। সুবহানাল্লাহ।