মধ্য এশিয়ার রুক্ষ মরুভূমি এবং বরফশীতল মালভূমিতে আজও বিচরণ করে চলেছে এক জীবন্ত ইতিহাস ব্যাক্ট্রিয়ান উট। সাধারণ উটের মতো একটি নয়, এদের পিঠে রয়েছে দুটি কুঁজ, যা এদের কেবল স্বতন্ত্রই করেনি, বরং ইতিহাসের অন্যতম সেরা রণকৌশলী চেঙ্গিস খানের অপ্রতিরোধ্য বাহিনীর প্রধান বাহনে পরিণত করেছিল। এই উটগুলো শুধু মঙ্গোলিয়ার বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতেই নয়, সিল্ক রোডের দুঃসাহসিক বণিকদেরও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী ছিল।
এক কুঁজওয়ালা ড্রমেডারি উটের সাথে এদের পার্থক্য শুধু বাহ্যিক নয়, বরং টিকে থাকার ক্ষমতার দিক থেকেও এরা বিস্ময়কর। এদের লম্বা, ঘন পশম গ্রীষ্মে সূর্যের তীব্র তাপ থেকে যেমন এদের বাঁচায়, তেমনই গোবি মরুভূমির হাড় কাঁপানো শীতে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও উষ্ণ রাখে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, এদের দুটি কুঁজ পানি সংরক্ষণের জন্য নয়, বরং চর্বির ভান্ডার হিসেবে কাজ করে। যখন খাবারের অভাব দেখা দেয়, তখন এই চর্বি শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং কুঁজগুলো নরম ও থলথলে হয়ে যায়। এরা একসাথে প্রায় ১৩৫ লিটার পর্যন্ত পানি পান করতে পারে এবং তৃষ্ণা মেটাতে প্রয়োজনে বরফও খেতে পারে।
ঐতিহাসিকভাবে, এদের দুটি কুঁজের মাঝের সমতল অংশ সৈন্যদের জন্য এক আরামদায়ক এবং স্থিতিশীল বসার জায়গা তৈরি করে দিত, যা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চেঙ্গিস খানের সৈন্যরা এই উটগুলোকে শুধু বাহন হিসেবেই নয়, রসদ পরিবহন এবং যুদ্ধের কৌশলগত প্রয়োজনেও ব্যবহার করত। বর্তমানে এদের গৃহপালিত প্রজাতি মধ্য এশিয়ায় পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হলেও, এদের বন্য প্রজাতিটি (Camelus ferus) আজ মহাবিপন্ন। পারমাণবিক পরীক্ষার তেজস্ক্রিয়তা, চোরাশিকার এবং খনিজ উত্তোলনের কারণে প্রকৃতি থেকে এই প্রাচীন যোদ্ধারা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে, যা এক নীরব সংকট তৈরি করেছে।