গুয়ানাহুয়াতোর মমিরা প্রমাণ, মৃত্যুর পরও দেহ কথা বলে।
মেক্সিকোর গুয়ানাহুয়াতোর প্রখর রোদে পোড়া মাটির গভীরে দশকের পর দশক লুকিয়ে ছিল এক অদ্ভুত রহস্য। একে একে যাদের তুলে আনা হয়েছিল, তারা ছিল না সোনার ভাণ্ডারে ঘেরা কিংবা মিশরের ফারাওদের মতো কাপড়ে মোড়ানো। প্রকৃতিই তাদের সংরক্ষণ করেছিল। ফাঁকা চোখের গর্ত যেন বয়ে বেড়াচ্ছে হারানো গল্পের ভার, আর বিকৃত মুখভঙ্গি নীরবে বলছে হঠাৎ থেমে যাওয়া জীবনের কথা।
এরা হলো গুয়ানাহুয়াতোর মমি—এক ভয়ঙ্কর অথচ বিস্ময়কর প্রমাণ, যা দেখায় মৃত্যুর পরও সবসময় পচন ধরেই না। সাধারণ মমির মতো এগুলোকে কেউ বালসাম বা সংরক্ষণ করেনি। বরং গুয়ানাহুয়াতোর শুষ্ক, খনিজে ভরা মাটি তাদের দেহের আর্দ্রতা শুষে নিয়ে পচন থামিয়ে দেয়, আর এভাবেই অদ্ভুতভাবে টিকে যায় তাদের চেহারা। অনেক মমির শরীরে এখনো রয়ে গেছে কবরের সময়কার পোশাক, আর তাদের হাড়ের আঙুল যেন জমে আছে চিরদিনের জন্য।
১৮৩৩ সালের কলেরার মহামারিতেই এদের অনেকের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সেই ঝড় যখন শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ দ্রুত প্রিয়জনদের মাটিচাপা দেয়, যেন রোগ আর না ছড়ায়। কিন্তু কয়েক দশক পর এক নির্মম বাস্তবতা সামনে আসে—গুয়ানাহুয়াতোতে কবর চিরস্থায়ী ছিল না। পরিবার যদি সমাধি করের টাকা দিতে না পারত, তখন কবর খুঁড়ে তুলে আনা হতো লাশ। আর মাটির নিচে দেখা মিলেছিল এক অভাবনীয় দৃশ্যের ডজনখানেক প্রাকৃতিকভাবে মমিতে পরিণত হওয়া দেহ, যাদের চামড়া সময়ের সঙ্গে শক্ত হয়ে গেছে, আর মুখে আঁকা রয়ে গেছে শেষ মুহূর্তের আতঙ্ক।
সবচেয়ে ছোট আর মর্মান্তিক মমিটি হলো এক ভ্রূণ, যে আজও মায়ের বুকে শুয়ে আছে। বিশ্বাস করা হয়, এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রাকৃতিক মমি নীরব হয়ে থাকা এক সতর্কবার্তা, জীবনের ভঙ্গুরতার প্রতীক।
আজ এই মমিগুলো রাখা আছে Museo de las Momias-এ। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসে দেখতে। কেউ আসে কৌতূহল মেটাতে, কেউ বা ইতিহাস জানতে। কিন্তু যে-ই আসুক না কেন, সবার মনেই থেকে যায় অদ্ভুত এক অনুভূতি—এই বিস্মৃত আত্মাগুলোর এখনো বলার মতো গল্প বাকি আছে।
মেক্সিকোর গুয়ানাহুয়াতো...
যেখানে কবর মানে চিরনিদ্রা নয়।
১৮৩৩ সালের কলেরায় হঠাৎ ঝরে যাওয়া শত শত প্রাণ,
দশক পর মাটির নিচে বেরিয়ে আসে ভয়ংকর সত্য—
প্রকৃতির তৈরি মমি, যাদের চোখের ফাঁকা গহ্বর আজও তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
সবচেয়ে মর্মান্তিক—এক মায়ের বুকে চিরঘুমে শুয়ে থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট মমি।