আব্বা কলেজের বেতন দিতে ওইবো। স্যার কইছে কাইলকাই দিতে ওইবো। ছেলে আশিষের কথা শুনে লুৎফর মিয়া একটু হেসে ঘারে রাখা গামছাটা হাতে নিয়ে ঘাম মুছে বললো, আইচ্ছা আব্বা তুমি কোনো চিন্তা কইরোনা কাইলকাই টেহা দিয়া দিমু। তুমি মন দিয়া পড়ালেহা করো৷

মানুষের জমিতে কাজ করে সংসার চালায় লুৎফর মিয়া। মা মরা ছেলেকে কোনো কিছুর অভাব বুঝতে দেননি তিনি। গ্রামের আটখোরা একটা কুঁড়েঘরে কোনো রকম বাপ ছেলে দিন কাটায়। মানুষের জমিতে দিনরাত পরিশ্রম করে ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছে। "ছেলে একদিন অনেক নাম করবে আর একজন মানুষের মতো মানুষ হবে " এই আশায়।

লুৎফর মিয়া গোসল করে উঠানের এক কোনে উনুনে ভাত বসাচ্ছিলো এমন সময় আশিষ এসে বললো, আব্বা প্রতিদিন আলো সিদ্ধ দিয়া ভাত খাইবার মন চাইনা। মেলা দিন গোস্তো খাইতে মন চাইতাছি কইবার পারিনা। ছেলে আশিষের মুখের কথা শুনে মুহুর্তেই লুৎফর মিয়ার মুখ মেঘে ঢেকে যায়। লুৎফর মিয়া মুখে জোরপূর্বক হাসি নিয়ে বললো,আব্বা আইজকা কোনো রকম খাইয়া লাও কাইলকা আমি দেহি গোস্তো আনতে পারি কিনা। আশিষ বিরক্ত নিয়ে বললো, আব্বা কাইলকা গোস্তো দিয়া ওইলে ভাত খামু নইলে আমি ভাত খামু না মানে না.. লুৎফর মিয়া আশিষ এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, আইচ্ছা আব্বা কাইলকা লইয়া আমুনে তুমি গিয়া পড়তে বসো।

মালিক আইজকা ১০০ টেহা বেশি দিবেন? পোলাডা গোস্তো খাইবার চাইছে। আজম মিয়া মুখে পান চিবোতে চিবোতে বললো, অতো গোস্তো খাইবার মন চায় ক্যান? ওইসেতো গরীবের ঘরে আবার এতো শখ কইথ্থেইকা আইয়ে? লুৎফর মিয়ার মুখটা শুকিয়ে গেছে তখন।

ভাই ৫০ টেহার মাংস দিবেন? পোলাডা আমার খাইবার চাইছে? মাংসওয়ালা লুৎফর মিয়ার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে বললো, চাচা ৫০ টেহার মাংস দেওন যাইবোনা। ৫০ টেহার আবার মাংস আছেনি? দেননা ভাই আমার পোলাডা রাগ করবো..দেননা ভাই দেননা... অবশেষে দোকানদার হুমকি দিয়ে বললো, সর ছোডলোকের বাচ্চা। চোখে পানি নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গেলো বাড়ি।

লুৎফর মিয়া বাড়ি যেতেই আশিষ খুশি হয়ে বললো,আব্বা গোস্তো আনছো? লুৎফর মিয়া মাথা নিচু কইরা বললো, আব্বা আইজকা কষ্ট কইরা আলো সিদ্ধ দিয়া খাইয়া লাও কাইলকা আমি যেভাবেই হোক গোস্তো লইয়া আমু।

এর পরেরদিন লুৎফর মিয়া জমিতে দ্বিগুন কাজ করে বাড়িতে ১ পোয়া মাংস নিয়ে গিয়েছিলো। এইসব ভাবতেই লুৎফর মিয়ার চোখে পানি গড়গড়িয়ে পড়ছে। যে ছেলের জন্য এতো কিছু করলো আজ সেই ছেলেই তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছে। আজ ছেলের এতো বড় বাড়িতেও জায়গা হয়নি লুৎফর মিয়ার। অবশেষে শেষ নিশ্বাস তিনি এই বৃদ্ধাশ্রমেই ত্যাগ করেন।

২০ বছর পর..

আজ আশিষ এবং তার স্ত্রী বৃদ্ধাশ্রমে। তাদের সন্তান একটু আগে এই জায়গায় রেখে গেছে তাদেরকে। তাদের ছেলের বউ তাদের আপদ বলে নাম দিয়েছে বলে তাদের ছেলেকে কানঘুষা দেওয়াতে এইখানে রেখে গেছে দুজনকে। আশিষের চোখে পানি। মনে মনে বললো,..."আমার বাবার সাথে যে অন্যায় আমি করেছি তার ফলই আমি ভোগ করছি। পাপ বাপকেও ছাড়েনা। আমার বাবার সাথে অন্যায় করার শাস্তি এখন আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।

শিক্ষাঃ প্রকৃতি ছাড় দেয়, ছেড়ে দেয়না।

#collected

image