২০২৩ সালে দেশের কম্পিউটার বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আশা
***********************************************************************
করোনা–পরবর্তী দেশের কম্পিউটার পণ্যের বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ২০২২ সালটি ছিল করোনা থেকে ঘাটতি কাটিয়ে ফিরে আসার বছর। বেড়েছিল ক্রেতা ও বিক্রি। তবে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী, আমদানিকারকের পক্ষে এবং রপ্তানিকারকের অনুকূলে আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধের (এলসি) অনিশ্চয়তার কারণে বছরের শেষ ভাগে দুশ্চিন্তায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। ২০২৩ সালে ব্যবসা কেমন হবে, এ নিয়ে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার খাতের ব্যবসায়ী ও সংগঠনের নেতারা চিন্তাভাবনা করছেন।
কম্পিউটার পণ্যের সবচেয়ে বড় খুচরা বিক্রেতা রায়ানস কম্পিউটারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ হাসান বলেন, ‘কোভিড–পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা। তবে নানা ক্ষেত্রে সেই ঘুরে দাঁড়ানো ঠিকভাবে হয়নি। বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে ব্যবসা মন্দা গেছে সেটা বলা যাবে না।’ বিক্রি কেমন ছিল, জানতে চাইলে আহমেদ হাসান বলেন, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বিক্রি কম হয়েছে। এই কমার হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ২০২৩ সালে পণ্যে দাম বেশি থাকবে বলে ধারণা করছেন আহমেদ হাসান। সরকার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেগুলো ব্যবসাবান্ধব নয়। ২০২৩ সালে সেগুলো প্রত্যাহার না করলে ব্যবসার ক্ষেত্রে আরও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। পণ্য বিক্রিও বাড়বে না।
একই সুরে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি সুব্রত সরকার। ‘গত বছরে কোভিডের মন্দা থেকে ফিরে এলেও বিক্রি তেমন একটা বাড়েনি। কোভিডের সময় আমাদের ব্যবসায় ধস নামে। বিক্রি প্রায় থেমে গিয়েছিল। কোভিডের পর আমরা ফিরে আসার চেষ্টা করেছি। ২০২২ সালে ধীরে ধীরে পণ্য বিক্রি বেড়েছে। তবে সেই বিক্রি করোনার আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম।’
করোনায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পণ্যে আমদানি কমে গেছে গত বছরে। আমদানি কমলেও দেশের বাজারে প্রযুক্তি পণ্যের কোনো সংকট তৈরি হয়নি। ২০২৩ সালে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নতুন অনেক পণ্য আসবে বলে ধারণা বিসিএস সভাপতির। নতুন পণ্যগুলোতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পণ্যের সামাহার থাকবে। একই সঙ্গে দেশের বাজারে বেশি দামের পণ্যের বিক্রি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের কিছু সিদ্ধান্তে বেশ অবাক হয়েছেন সুব্রত সরকার। ২০২২ সালের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারি পর্যায়ে নতুন কোনো কম্পিউটার কেনা হবে না। তিনি বলেন, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়ে যদি কম্পিউটার না কেনার কথা ঘোষণা দেয়, তাহলে সরকার কীভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করবে? এ ছাড়া সরকার আমদানি করা প্রযুক্তিপণ্যে ওপর নতুন ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে। এটিও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
কম্পিউটার ব্যবসা খাতের নেতারা মনে করেন, ভ্যাট আরোপ করার কারণে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। এতে সাধারণ মানুষ পণ্যগুলো কিনতে পারবে না। সরকার ল্যাপটপ, প্রিন্টার এবং টোনার দেশের উৎপাদনের ওপর জোর দিয়ে ভ্যাট আরোপের কথা বলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত চাহিদার তুলনায় খুব সামান্য পরিমাণ ল্যাপটপ উৎপাদন করা হয় দেশে। প্রিন্টারের কোনো কারখানা নেই। এমনকি ভালো মানের টোনার কাট্রিজও দেশে উৎপাদন করা হয় না। তাই ২০২৩ সালে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান অনেকেই।
খুচরা পর্যায়ে প্রযুক্তিপণ্য কেনাকাটায় বিগত বছরের চেষ্টা সুফল পাওয়া যাবে ২০২৩ সালে। বিসিএসের সহসভাপতি ও স্টারটেকের অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. রাশেদ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘বিক্রয়ত্তোর সেবার বিষয় ২০২২ সালে বেশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অনেকে ক্রেতাকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। ২০২৩ সালে আমার সেই ধারাটি বজায় রাখব। আন্তর্জাতিক বিক্রয়োত্তর সেবাও আমরা যথাযথ সময় দিয়েছি।’
কয়েক বছর ধরে ক্রেতাদের জন্য এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) নিয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি কাজ করছে। তার সুফল ২০২৩ সালে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বিসিএসের নেতারা। এ প্রসঙ্গে মো. রাশেদ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সব পণ্যের জন্যই এমআরপি নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে অনলাইন এবং বাস্তবের দোকানে সবাই নির্দিষ্ট দামে পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন। এটি ক্রেতাদের জন্য ২০২৩ সালের পর একটি বড় পাওয়া। এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে বিক্রয়োত্তর সেবা নীতিমালা নিয়ে কাজ করছি। নতুন বছরের প্রথমেই আমার এ বিষয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে জমা দিয়েছি। ২০২৩ সালে কোনো ক্রেতা বিক্রয়োত্তর সেবা নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।
২০২২ সালের শেষের কয়েক মাস ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই বাজে সময় গেছে। ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী, এলসি (ঋণপত্র) খোলা নিয়ে ঝামেলাসহ নানা কারণে হার্ডওয়্যার ব্যবসা কঠিন সময় পার করেছে। এই ধারা নতুন বছরের বজায় থাকলে প্রযুক্তি বাজারের ঘুরে দাঁড়ানো আরও কঠিন হবে। মো. রাশেদ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগের বছরের তুলনায় বিক্রি কমেছে। বছরের শেষ দিন পর্যন্ত এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ২০২৩ সাল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছি না। ২০২৩ সালকে নির্বাচনের বছর হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কাই বেশি। তাই বিক্রি আরও কমতে পারে।’
গত বছর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটি, এলিফ্যান্ট রোডের ইসিএস কম্পিউটার সিটিসহ কম্পিউটার বাজারগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা ও বিক্রি বাড়ছিল জ্যামিতিক হারে। সেই ধারা ২০২৩ সালে আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিসিএস কম্পিউটার সিটির সভাপতি এ এল মজহার ইমাম চৌধুরী। ২০২২ সালের শুরুতে ক্রেতাদের মধ্যে একটা ভয় ছিল বাজারে যাওয়া নিয়ে। সেটা আস্তে আস্তে কেটে গেছে। এখন বাজারে ক্রেতার সমাগম বেশ ভালোই। করোনার কারণে বিক্রয়োত্তর সেবা নিতে অনেকেই আগে মার্কেটে আসতেন না। এখন সেই সংখ্যাটি বেড়েছে।
Source: প্রথম আলো