১১৭ থেকে ৬৩—৫৪ কেজি ওজন কমিয়ে বডিবিল্ডার এ তারকা
***********************************************************************
রুবেলের গল্পটা নাটকীয়! একেবারেই অলস ছিলেন এ তরুণ সংগীতশিল্পী। যাঁর জীবনের মানেই ছিল দুই—খাই আর ঘুমাই। এই করে কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পৌঁছানোর আগে রুবেলের ওজন হয় ১২৩। একসময় ওজন কমানোর উদ্যোগ নেন তিনি। এক বছরে ১১৭ কেজি থেকে ৫৪ কেজি ওজন কমিয়ে ৬৩ কেজি করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দেন দেশের সংগীতাঙ্গনে। শুধু ওজন কমানো নয়, ব্যান্ডশিল্পী রুবেল এখন বডিবিল্ডার। মডেল হিসেবে কাজ করেছেন।
দেশের ব্যান্ডসংগীতের ভুবনে পরিচিত মুখ রুবেল মেইজ জনপ্রিয় হেভিমেটাল ব্যান্ড মেটাল মেইজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ঢাকা মিউজিক ফেস্টসহ কিছু বড় সংগীতের আসরে অংশ নিয়েছেন। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের আলোচিত ব্যান্ড নোভায় যোগ দেন। ‘তাহসান অ্যান্ড দ্য সুফিস’ দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। পপ তারকা আজম খানের সঙ্গে ২০০০ সাল থেকে কাজ করেছেন। বাজিয়েছেন আজম খানের বেশ কিছু গানের সঙ্গে। কনসার্টেও আজম খানের সঙ্গে সংগত করতেন। আজম খানের মৃত্যুর আগপর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।

ব্যান্ডজগতে আলোচিত এ শিল্পী শরীরের অতিরিক্ত ওজনের কারণে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর নিজের চেষ্টায় পেয়েছেন নতুন জীবন। প্রথম আলোকে সে গল্পই শোনালেন রুবেল নিজেই, ‘একসময় আমার জীবনের আনন্দ বলতে ছিল দুটি বিষয়—খাওয়া আর ঘুম। হাঁটাচলা, ঘোরাফেরা করতে ভালো লাগত না। খেলাধুলা তো দূরের কথা। স্কুল-কলেজে আমাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করত এবং মোটার জন্য পরিহাস করত।’

ছোটবেলায় বাড়তি ওজন থেকে মুক্তির জন্য মা–বাবা রুবেলকে পার্কে ও জিমে পাঠিয়েছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বরং রুবেল ব্যায়াম, হাঁটাচলা না করে পছন্দের খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরতেন। এই করে ছোটবেলায় ওজন দাঁড়ায় ১০০ কেজির বেশি। এ অবস্থায় বিয়ে করেন। ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন রুবেল। এ সময় অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়া আর আলসেমি শরীরে পেয়ে বসে। শেষ পর্যন্ত ওজন দাঁড়ায় ১২৩ কেজি। ওই সময় নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

রুবেল বলেন, ‘এত কম বয়সে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল যে জীবনটা দুর্বিষহ লাগত। একদিন চিন্তা করলাম, জীবনটা দিন দিন শেষ করে ফেলছি। শরীরের দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তাই নিজেকে পরিবর্তন করাটা খুব জরুরি। ঠিক করলাম, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।’

রুবেল ঠিক করেন, আর শরীরকে বাড়তে দেওয়া যাবে না। কিন্তু সময় বের করা একটু কঠিন হয়। প্রতি রাতে ঠিক করেন, সকালে হাঁটতে বের হবেন। কিন্তু সকালে আর হাঁটা হয় না। ঠিক করলেন শরীরকে অন্যভাবে শায়েস্তা করতে হবে। কষ্ট কম করে কাজের সময় নষ্ট না করে শরীরচর্চা করার উপায় বের করেন রুবেল। শুরু করেন অফিস থেকে হেঁটে বাসায় ফেরা। ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করে রুবেল বলেন, ‘রাস্তার এত যানজট আর শব্দদূষণে ক্লান্ত হয়ে যেতাম, তাই কানে মিউজিক দিয়ে নিরাপদে রাস্তার সাইড দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।’ এভাবে কয়েক মাস পার হলো। তারপর শুরু করলেন সাইকেল চালনা। রাতে বাসায় ফিরে ৩০ মিনিট সাইক্লিং। নিয়মিত ২০ মিনিট হাঁটা, ৩০ মিনিট সাইক্লিং—মিশন শুরু।

এরপর ওই সময় বাংলাদেশে একটি ইন্টারন্যাশনাল চেইন গোল্ড জিম চালু হয়। ঠিক করলেন ভর্তি হবেন সেখানে। কিন্তু আলাদা সময় বের করা অনেক কঠিন। এমন সময় ভোরে ওঠার চেষ্টা করলেন। সাইকেলে করে রমনা উদ্যানে গিয়ে হালকা জগিং শুরু। প্রথম কয়েক মাস দৌড়াতে কষ্ট হতো। কিন্তু হাল ছাড়েননি।

সব মিলিয়ে ১১৭ কেজি থেকে ৫৪ কেজি ওজন কমিয়ে ৬৩ কেজিতে। সে বছর বাংলাদেশে ওজন কমিয়ে রেকর্ড করেন তিনি। হয়েছিলেন ‘মিস্টার বিফোর/আফটার’। রুবেল বলেন, মানুষ চাইলে সব পারে, শুধু ইচ্ছা থাকা যথেষ্ট।
এখন নিজের ব্যান্ড মেটাল মেইজের সঙ্গে বেশি সময় কাটছে রুবেলের। পাশাপাশি শরীরচর্চা চলছে। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করছেন তিনি। ম্যারাথনেও তিনি অংশ নেন। পেশাদার কাজের পাশাপাশি তিনি ব্যান্ডের নতুন অ্যালবামের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে চারটি গানের কাজ শেষ হয়েছে। আশা করি, অনেক দিন বিরতির পর একটি ভালো অ্যালবাম উপহার দিতে পারব।’

Source: প্রথম আলো

image