সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সুরক্ষা
***********************************************************************
নতুন চাকরি পাওয়া হোক কিংবা কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান দেওয়াটা এখন যেন উদ্যাপনেরই অংশ। পরিবার ও বন্ধুদের বড় অংশের কাছে মুহূর্তেই নিজের খবর পৌঁছে দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিকল্প নেই। তাই অনেকের কাছেই ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা লিংকডইনের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো দৈনন্দিন জীবনের নানান ঘটনা ভাগ করে নেওয়ার এক অপরিহার্য অংশ।
কিন্তু এই নির্দোষ পোস্ট বা খবরগুলো কখনো কখনো হয়ে ওঠে ক্ষতির কারণ। কারণ, সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করেন। দেশেও তো ব্যবহারকারী কম নয়। তাই হ্যাকার ও সাইবার অপরাধীরাও মুখিয়ে থাকেন এখানে আক্রমণ করতে। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অধিকাংশ মানুষ জানেন না কীভাবে তথ্য সুরক্ষিত রাখতে হয়।
আর কেমন তথ্য নিয়ে হ্যাকাররা তাঁর ক্ষতি করতে পারেন। অধিকাংশ মানুষের তথ্যই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়ায় কোনো সুরক্ষা ছাড়াই। আবার কখনো কখনো তাঁদের প্রোফাইল বা অ্যাকাউন্টটিও যথেষ্ট সুরক্ষিত থাকে না। ফলে এই সবই হয়ে ওঠে হ্যাকারদের সহজ টার্গেট।
কেন প্রয়োজন অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা
তথ্য চুরি: প্রায় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার নাম, ছবি, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই–মেইল, পছন্দ, মতাদর্শ, শিক্ষাগত তথ্য ইত্যাদি প্রকাশের সুযোগ থাকে। এসব তথ্য ব্যবহার করে সাইবার অপরাধীরা পরিচয় চুরি করতে পারেন। এমনকি আপনার নামে কোনো অপরাধও সংঘটিত করতে পারেন। তা ছাড়া আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তাঁরা আপনার সব তথ্য হাতিয়ে নেন। ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশিত হলে পরবর্তী সময়ে আপনি হতে পারেন হয়রানির শিকার। কখনো গোপনীয় তথ্য বা ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ও করে নেন অপরাধীরা।
গোপনীয়তার উদ্বেগ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা অসাবধানতাবশত নিজের, পরিবারের, বন্ধুদের বা সহকর্মীদের ব্যাপারে সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে ফেলেন। এতে তাঁরা অজান্তেই অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠেন।
ফিশিং: প্রায়ই প্রতারণামূলক ওয়েবসাইট, ম্যালওয়্যার (ভাইরাস) সংক্রমিত লিংক (ওয়েব ঠিকানা) ঘুরে বেড়ায় ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে। অনেক সময় অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এসব লিংকে ক্লিক করার জন্য ব্যবহারকারীদের আহ্বান জানান হ্যাকাররা। এসব লিংকে ক্লিক করামাত্রই ব্যবহারকারীদের সব তথ্য চলে যায় হ্যাকারদের কাছে।
সৃজনশীল কাজের স্বত্ব, কপিরাইট না মানা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই তাঁদের সৃজনশীল কাজ যেমন গান, ভিডিও, লেখা, আলোকচিত্র, আঁকা ছবি প্রকাশ করেন। এসব কাজ অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যবহারকারী নিজের কাজ বলে চালিয়ে দেন। এতে নিজের মেধাস্বত্ব সুরক্ষিত থাকে না।
যেভাবে সুরক্ষিত রাখবেন আপনার অ্যাকাউন্ট
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও গোপনীয়তা রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আপনার অ্যাকাউন্টে শুধু আপনার তথ্যই থাকে না, আপনার বন্ধু বা অনুসারীদের তথ্যও থাকে। তাই আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলে হ্যাকার শুধু আপনার তথ্যই নয়, অন্যদের তথ্যও পেয়ে যান। নিজের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষার জন্য যা করা যেতে পারে।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের ব্যবহার
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, লিংকডইন—প্রতিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিন। যে পাসওয়ার্ডে একটি বড় হাতের ও ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন থাকে, সেটিকে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড হিসেবে ধরা হয়। এ ধরনের পাসওয়ার্ড হ্যাকাররা সহজে হ্যাক করতে পারেন না। এ ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে আলাদা পাসওয়ার্ড দিন। একই পাসওয়ার্ড সব অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা যাবে না।
দ্বিস্তর বা টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (বা অথেনটিফিকেশন) হচ্ছে পাসওয়ার্ড ছাড়াও ই–মেইল বা ফোন নম্বর অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করা। আপনার অ্যাকাউন্টে যখনই কেউ ঢুকতে চাইবেন (লগইন) তখন আপনার ই–মেইল বা ফোন নম্বরে একটি নোটিফিকেশন বা সংকেত চলে যায়। ওই সংকেত বা লিংক ছাড়া কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবেন না, এমনকি আপনি নিজেও না।
সফটওয়্যারের নিয়মিত হালনাগাদ
আপনার ব্রাউজার (ওয়েবসাইট দেখার সফটওয়্যার), স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—এগুলো নিয়মিত হালনাগাদ (আপডেট) করতে হবে। এতে সফটওয়্যার ও অ্যাপগুলোর ত্রুটি ঠিক হয়ে যায়। একই সঙ্গে সর্বশেষ নিরাপত্তার হালনাগাদ পাওয়া যায়।
পোস্ট করার আগে গোপনীয়তা সেটিংস
নিজের ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়ার আগে দেখে নিতে হবে সেটি পাবলিক, ফ্রেন্ডস, নাকি কোনো বিশেষ গ্রুপের জন্য শেয়ার করছেন। ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য ‘পাবলিক’ না করা ভালো। পাবলিক মানে হলো আপনার বন্ধুতালিকায় না থাকা মানুষেরাও সেই পোস্ট দেখতে পাবেন।
ভাবতে হবে শেয়ারের আগেই
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী তথ্য প্রকাশ করছেন বা শেয়ার করছেন, সে ব্যাপারে সতর্কতা ও মনোযোগ দরকার। কখনোই নিজের ঠিকানা, ফোন নম্বর বা আর্থিক বিবরণীর পোস্ট দেওয়া যাবে না। শুধু তা–ই নয়, আপনার কারণে যেন অন্য কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিঘ্নিত না হয়, সেটিও মাথায় রাখুন।
অপরিচিত লিংকে ক্লিক নয়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ওয়েব ঠিকানা বা লিংকে ক্লিক করার আগে এবং কোনো কিছু নামানোর (ডাউনলোড) আগে উৎস দেখে নিতে হবে। উৎস বিশ্বস্ত মনে না হলে কোনো কিছুতেই ক্লিক করবেন না। টাকাপয়সার প্রলোভন দেখানো কোনো কিছুতে ক্লিক করার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো ম্যালওয়্যার (ভাইরাস)।