সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই এক বৃদ্ধ এগিয়ে এলেন আমার দিকে। তারপর শুরু হলো আমাদের কথোপকথন—
বৃদ্ধ: দিদিভাই, একটা ধূপ নাও না, দিদি আমার… আজ একটাও বিক্রি হয়নি!
(বলা বাহুল্য, কিছুক্ষণ ওনার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম। এই বয়সে একজন মানুষ এত কাঠফাটা রোদে কীভাবে দাঁড়িয়ে আছেন ভাবতেই মনটা কেমন হয়ে গেল। সম্বিৎ ফিরল আবার ওনার ডাকে)
বৃদ্ধ: ও দিদিভাই, নেবে??
আমি: হ্যাঁ, হ্যাঁ, দাও একটা। কত?
বৃদ্ধ: মাত্র ১২ টাকা, দিদি।
আমি: আচ্ছা বলো তো, এই রোদে দাঁড়িয়ে কষ্ট হয় না?
বৃদ্ধ: হয় তো, খুব কষ্ট হয়। গলা তুলে হাঁকও দিতে পারি না, দিদিভাই!
আমি: রোজ এখানেই বসো?
বৃদ্ধ: হ্যাঁ, দিদি, এখানেই।
আমি: বাড়ি কোথায়? কখন আসো?
বৃদ্ধ: বাড়ি তো বারাসাতে। ওই ৯টা ৪৪- এর দত্তপুকুর ট্রেনে নামি। ১০টার ভেতর এখানে চলে আসি।
আমি: ছেলে-মেয়ে নেই?
বৃদ্ধ: ছেলে নেই, দিদি। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে।
আমি: মেয়েরা দেখে না তোমায়?
বৃদ্ধ: ওদের থেকে কী আর চাইতে পারি… (বলেই মুখ নিচু করে নিলেন। বুঝলাম, মেয়েরা বৃদ্ধ মা-বাবাকে আর দেখেন না।)
আমি: বাড়িতে আর কে আছেন?
বৃদ্ধ: গিন্নি আছেন, অসুস্থ।
আমি: এতে চলে তোমার?
বৃদ্ধ: ওই চলে, দিদি। পুঁজি তো কম। এই যে তুমি নিলে একটা, দু-টাকা লাভ হলো। তুমি তো আমার লক্ষ্মী দিদি। কাজ না করলে চলবে বলো!
আমাদের করনীয় কি ?
জীবনের প্রতিটি মোড়ে এভাবেই দেখা হয়ে যায় এমন অসহায় মানুষদের সাথে। আমাদের অনেকেরই হয়তো তেমন প্রয়োজন নেই, তবুও একটা ছোট্ট জিনিস কিনে নেওয়া, বা কিছু কথা বলা, ওদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।
চলুন, না হয় প্রয়োজন না-ও থাকে, তবু রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এই মানুষগুলোর কাছ থেকে একটা কিছু কিনে নিই। আমাদের সামান্য সহযোগিতা হয়তো ওদের কাছে বিশাল আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে।