নখের সমান ক্ষুদ্র এই মাছটি হাতির থেকেও জোরে শব্দ করতে পারে!
Danionella cerebrum নামের এক ক্ষুদ্র মাছ মাত্র আধ ইঞ্চি লম্বা হলেও ১৪০ ডেসিবেলেরও বেশি আওয়াজ তৈরি করতে পারে, যা বিমান বা হাতির চেঁচামেচির মতোই জোরে। এই মাছটি মিয়ানমারের Bআগে Yoma পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে। স্বচ্ছ দেহ আর মাথার খুলি না থাকায় এটি স্নায়ুবিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার জন্য আকর্ষণীয় একটি প্রাণী, কারণ এর মস্তিষ্ক পৃথিবীর কশেরুকপ্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।
জার্মানির একদল বিজ্ঞানী এই মাছের উচ্চ আওয়াজের রহস্য বোঝার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা তিন-চারটি মাছকে একসাথে একটি ট্যাংকে রাখেন এবং হাই-স্পিড ভিডিওতে মাছের আচরণ রেকর্ড করেন। গবেষণায় দেখা যায়, মাছটি একটি বিশেষ পেশির মাধ্যমে পাঁজরকে এক টুকরো কার্টিলেজের সাথে টেনে রাখে, এবং পাঁজরটি ছেড়ে দিলে তা সাঁতার থলির সাথে ধাক্কা খেয়ে জোরে ড্রাম বাজানোর মতো আওয়াজ তোলে। এই অনন্য শব্দ উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে Danionella cerebrum শুধুমাত্র স্নায়ুবিজ্ঞান নয়, শব্দ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
পুরুষ মাছের পাঁজরের হাড় স্ত্রী মাছের তুলনায় বড় আর শক্ত, তাই তারা এই আওয়াজ করতে পারে। অন্য মাছরাও সাঁতার থলির সাহায্যে জোরে আওয়াজ করতে পারে, যেমন প্রজননের সময় ব্ল্যাক ড্রাম মাছ, যা কখনও কখনও কারও রাতের ঘুম ভাঙিয়ে দিতে পারার জন্য যথেষ্ট। আর পুরুষ মিডশিপম্যান মাছ প্রজননের সময় ১৩০ ডেসিবেলের ড্রোনিং আওয়াজ করে।
কিন্তু D. cerebrum মাছের ১৪০ ডেসিবেলের আওয়াজ তাদের ছোট আকারের জন্য অন্য সব কশেরুকপ্রাণীর তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে জোরেই বটে। জার্মানির Senckenberg Research Institute and Natural History Museum-এর এক বিবৃতি অনুযায়ী, হাতির চিঁচিঁ আওয়াজও ১২৫ ডেসিবেল পর্যন্ত যায়।
যদিও গবেষকরা বুঝতে পেরেছেন এই ছোট মাছ এত জোরে আওয়াজ কীভাবে করে, কিন্তু কেন করে তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানেন না। তাদের ধারণা, মাছগুলো হয়তো কাদাযুক্ত পানিতে একে অপরকে খুঁজতে এই আওয়াজ করে। অথবা, যেহেতু শুধু পুরুষরা আওয়াজ করে, তাই হয়তো এরা সঙ্গীকে আকর্ষণ করতে বা অন্য পুরুষদের সতর্ক করতে এই আওয়াজ ব্যবহার করে।
২০২১ সালে, ল্যাবরেটরিতে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা যখন এই মাছ নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন বুঝতে পারেন যে তাঁরা একটি অজানা ও অশনাক্ত প্রজাতির সাথে কাজ করছেন। তখন তাঁরা এটির নাম দেন—যা স্নায়ুবিজ্ঞান ক্ষেত্রে এই মাছের গুরুত্বকে বোঝায়।
প্রজাতির নাম “cerebrum” এসেছে মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশের নাম থেকে। বাহ্যিকভাবে, এই মাছগুলো Danionella প্রজাতির অন্য মাছের মতোই দেখতে, আর কেবল কঙ্কাল পরীক্ষা করে বোঝা গেছে যে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা আসলে নতুন এক প্রজাতির সাথে কাজ করছিলেন, যা আগে বর্ণনা করা হয়নি।
