আমাদের টিভি খুললে, আমাদের ডিজিটাল মানচিত্র খুললে কোথাও তার সদুত্তর পাই না। কেউ জিজ্ঞেস করে না স্বাধীনতা অর্জনের পঞ্চাশ বছর পরে কোথাও একটু সুবাতাস, সিন্ধুতীর, একটু জল বা তেল পাওয়ার অধিকার এদের জন্য রয়ে গেছে কিনা। সে অধিকার মুছে গেছে। সে অধিকার শুধু মেট্রোপলিটন মধ্যবিত্তের জন্য। সে অধিকার শুধুমাত্র কবিতায় আছে। সে অধিকার ফেসবুকে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা শ্যামাপোকার মতো ওড়ে এবং পরেরদিন মৃত স্তূপ হয়ে পড়ে থাকে। এবং তারপর সকলকেই সকলে জানায়, ‘ঋদ্ধ হয়েছি’। কে ঋদ্ধ হয়, কার এই ঋদ্ধি— আমি কিছুই বুঝি না।
আজ যখন আমি এই পঞ্চাশ বছর বয়স্ক স্বাধীন দেশটার সংস্কৃতির দিকে তাকাই, দেখি, এই যে কোভিড যুগের মধ্যে দিয়ে আমরা চলেছি, এই সময়ে দাঁড়িয়ে দেশের গরিব মানুষেরা কীরকম ইরেজার দিয়ে পেনসিলের দাগ মুছে ফেলার মতো উধাও হয়ে গেল। তারা কোথাও নেই। যতদূর মোবাইলের টাওয়ার আছে, শুধুমাত্র ততদূর পর্যন্ত-ই সভ্যতা। আমরা এই নতুন সভ্যতার দিকে তাকিয়ে কিছু কথা বলি, কিছু লড়াই করি, বলা ভালো লড়াইয়ের ভাণ করি এবং ছদ্মসৈনিক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি...
বাঙালি একটা নতুন ক্রিয়াপদ আবিষ্কার করেছে, “লেখাটা একটু দেখবেন”। লেখাটা তো দেখার কিছু নেই, হয় পড়বেন, নয় পড়বেন না। ‘দেখবেন’ মানে? ‘দেখবেন’ মানে আমি আছি, যেন একটা হাজিরা দেওয়া, ‘দেখবেন’ মানে মলাটটাকে দেখানো। এইটে বলা, আমি নোট করলাম ও করালাম যে সাংস্কৃতিক স্তরে আমি আপনি উপস্থিত। এই উপস্থিতি-অনুপস্থিতির হার দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় এখন অবধি সাহিত্যের গুণমান নির্বাচন হচ্ছে।