নাম ছিল বিল হাস্ট। মানুষ তাঁকে চিনত “স্নেক ম্যান” নামে। সারা জীবন বিষধর সাপ নিয়ে কাটিয়েছেন তিনি—তবে শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং এক বিস্ময়কর বিশ্বাস থেকে। তাঁর মতে, সাপের বিষেই লুকিয়ে আছে বহু রোগের ওষুধ, এমনকি সুস্থতার চাবিকাঠিও।
শুরুর গল্পটা একটু অন্যরকম। ১৯১৭ সালে, মাত্র সাত বছর বয়সে খেলতে খেলতে প্রথমবার সাপ ধরেন হাস্ট। তখন থেকেই শুরু হয় সাপের প্রতি এক অদ্ভুত টান। ধীরে ধীরে পড়াশোনার গণ্ডি ছেড়ে পা রাখেন সাপের জগতে। নিজেই একটা ভ্রাম্যমাণ সাপ প্রদর্শনী দল গড়ে তোলেন এবং দেশজুড়ে ঘুরে ঘুরে মানুষের সামনে বিষধর সাপ নিয়ে দেখাতে থাকেন নানা কৌশল।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ১৯৪৭ সালে মিয়ামিতে গড়ে তোলেন “Miami Serpentarium”—একটা অভিনব সাপঘর, যেখানে প্রতিদিন দর্শকদের সামনে সাপের বিষ সংগ্রহ করতেন তিনি নিজে। আর তার পাশাপাশি শুরু করেন আরও এক অভূতপূর্ব কাজ—নিজের শরীরে অল্প মাত্রায় সাপের বিষ ইনজেকশন নেওয়া।
প্রথমে অল্প করে, পরে রীতিমতো নিয়ম করে নানা বিষধর সাপের বিষ নিতে শুরু করেন—কোবরা, মাম্বা, র্যাটল স্নেক, আরও কত কী! উদ্দেশ্য একটাই—শরীরে এমন প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা, যাতে সাপের কামড়েও প্রাণ না যায়।
এই অদ্ভুত পদ্ধতিই পরে তাঁকে অন্তত ২০ বার বাঁচিয়ে দিয়েছিল—যেখানে অন্য কেউ হলে নিশ্চিত মৃত্যু হতো। শুধু তাই নয়—তাঁর শরীরে গঠিত অ্যান্টিবডি কখনো কখনো অন্যের শরীরেও ব্যবহার করা হয়েছে। জানা যায়, এভাবে অন্তত ২১ জন মানুষের প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে।
মজার বিষয়, তিনি ছিলেন না কোনো ডাক্তার কিংবা বৈজ্ঞানিক। তবুও অভিজ্ঞতা, সাহস আর নিষ্ঠার কারণে বহু চিকিৎসক ও গবেষক তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন। সাপের বিষ দিয়ে আর্থরাইটিস, এমনকি মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের চিকিৎসা নিয়েও তিনি নানা পরীক্ষা চালান।
আর অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—এই ‘বিষ-পুরুষ’ বেঁচে ছিলেন একশো এক বছর। ২০১১ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বিশ্বাস করতেন, সাপের বিষই তাঁকে সুস্থ রেখেছে এত বছর।
প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানি মাছ ধরার ট্রলারের জালে একবার একটি পেঙ্গুইন আটকা পড়ল।জেলেটি টের পেয়ে দ্রুত জাল কেটে পেঙ্গুইনটিকে মুক্ত করে দেয়। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে পেঙ্গুইনটি চলে যাচ্ছিলো না। তাড়িয়ে দেয়া হলেও বারবার সে ফিরে আসছিলো। উপায় না পেয়ে জেলেটি পেঙ্গুইনটিকে সাথে করে বাসায় নিয়ে আসে।
পেঙ্গুইনটির থাকার জন্য আলাদা একটি ঘরের ব্যবস্থা করে। অতিরিক্ত গরমে বাঁচবে না বলে তার জন্য বিশেষভাবে এয়ারকন্ডিশনের ব্যবস্থা করা হয়। জেলে পরিবার নিজের ছেলের মত পেঙ্গুইনটিকে এডপ্ট করে নেয়, আদর করে তার নাম রাখে 'লা লা'।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, লালা পুরো মানুষের বাচ্চার মত পুরো মহল্লায় ঘুরে বেড়াতো। এলাকাবাসীও তাকে নিজেদের একজন ভেবেই ট্রিট করত। সবচেয়ে কিউট ব্যাপার হচ্ছে, প্রতিদিন সে পিঠে একটি ব্যাকপ্যাক নিয়ে মহল্লায় টহল দিতে বের হত। প্রতিদিন নিয়ম করে সে স্থানীয় মাছের দোকানে ঢুঁ মারত আর দোকানদার তাকে একটি মাছ খাইয়ে আরও কিছু মাছ তার ব্যাকপ্যাকে ঢুকিয়ে দিত! লালা ১৯৯৮ সালে মৃত্যুবরণ করে।
একটি বন্ধ দরজা… আর ৪২ বছরের নিঃশব্দ মৃত্যু!
সময়টা ১৯৬৬ সাল, অক্টোবর মাস। জায়গাটা ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবের এক পুরনো ফ্ল্যাট। চারপাশ নিস্তব্ধ। বৃষ্টি পড়ছে টুপটাপ, জানালার কাঁচে ধাক্কা খাচ্ছে হাওয়া।
এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা রাখা একটি ছোট টেবিলে। কাঠের চেয়ারে বসা একজন নারী—Hedviga Golik।তার চোখ স্থির টেলিভিশনের দিকে—সাদা-কালো পর্দায় চলছে সেই যুগের কোনো অনুষ্ঠান।এই নারী একাই থাকতেন। কারো সঙ্গে মেলামেশা করতেন না, বন্ধু ছিল না বললেই চলে। এক সময় সরকারি অফিসে চাকরি করতেন। পছন্দ ছিল বই আর চা। প্রতিবেশীরা জানতেন, Hedviga ভীষণ একা থাকতেন, তবে ছিলেন যথেষ্ট আত্মনির্ভরশীল।তাঁর দরজা সচরাচর কেউ দেখত না খোলা।
মাঝেমধ্যে কেউ কেউ খোঁজ নিতেন, কিন্তু Hedviga ঠিক কবে নিখোঁজ হলেন, কেউ জানেই না।তারপর হঠাৎ... নিঃশব্দে সেই দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল।চিরতরের জন্য।দিন যায়, মাস যায়, বছর গড়ায়…ধীরে ধীরে প্রতিবেশীরা তাকে ভুলে যেতে থাকে। কেউ ভাবত হয়তো কোথাও চলে গেছেন, কেউ বলত হয়তো মারা গেছেন কোনো হাসপাতালে। Hedviga আর ফিরলেন না। তাঁর নামটাও হারিয়ে গেল সময়ের পাতায়…
…এবং ঠিক ৪২ বছর পর,
২০০৮ সালের এক শরতের বিকেল। সরকারি ফ্ল্যাট অফিসের একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি অ্যাপার্টমেন্টের তালা ভাঙলেন। উদ্দেশ্য—ফ্ল্যাটটি সংস্কার করে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া।কিন্তু তালা খুলতেই যা দেখলেন, তা যেন কোনো হরর সিনেমার দৃশ্য...ঘরের ভেতরে চেয়ারে বসা এক কঙ্কাল, হাতে এক কাপ মগ, চোখ টিভির দিকে।ঘরের ভেতরে এতটাই ধুলো—প্রমাণ করে দেয়, কেউ সেই ঘরে দশক ধরে পা রাখেনি।
তবে ঘরের সবকিছু সাজানো-গোছানো, ঠিক যেন কেউ কালকেই ব্যবহার করে গেছে!তদন্তে জানা গেল—এই কঙ্কাল ছিল সেই হারিয়ে যাওয়া নারী, Hedviga Golik-এর!প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে, সে ঘরে বসেই নিঃশব্দে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর… আর কেউ বুঝতেই পারেনি!কিন্তু প্রশ্ন হলো— কীভাবে একটা মানুষের মৃত্যু এভাবে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে?৪২ বছর ধরে কেউ টেরই পেল না?এই শহরের হাজার মানুষের মাঝে কীভাবে হারিয়ে গেল এক নারীর অস্তিত্ব?
এই গল্প শুধু এক নারীর নিঃসঙ্গ মৃত্যুর নয়, এটি সমাজের নিস্তরঙ্গ অন্ধকারেরও প্রতিচ্ছবি।আমরা কি সত্যিই জানি, পাশের ফ্ল্যাটে কে বেঁচে আছে… আর কে নেই?
শতাব্দি পুরনো ধারণা ভুল প্রমাণ করে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো খুঁজে পেলেন এমন এক প্রাণী, যা অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। নাম এইচ. সালমিনিকোলা (Henneguya salminicola), যা স্যামন মাছের শরীরে বসবাস করে।
অনেক এককোষী জীব যেমন ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া অক্সিজেন ছাড়াই শক্তি উৎপাদন করতে পারে। একে বলা হয় anaerobic respiration। কিন্তু বহুকোষী প্রাণীও এমনভাবে অভিযোজিত হতে পারে, এটা ছিল প্রায় অকল্পনীয়।
গবেষণায় দেখা গেছে এইচ. সালমিনিকোলার শরীরে নেই কোনো মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ, যা সাধারণত প্রাণীর কোষে শক্তি উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। সাধারণত প্রাণী মাইটোকন্ড্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন ব্যবহার করে শক্তি তৈরি করে। কিন্তু এই পরজীবী প্রাণীটি সেই ব্যবস্থাই হারিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ বহুকোষী হয়েও এদের শক্তি উৎপাদনের জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে না।
মাছের দেহের অভ্যন্তরে যেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ অত্যন্ত কম, সেখানে টিকে থাকার জন্য এই প্রাণী শ্বাস না নিয়ে বেঁচে থাকার কৌশল রপ্ত করে। ফলস্বরূপ এটি মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম হারিয়ে এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে, যাতে শক্তি উৎপাদনে আর অক্সিজেনের উপর নির্ভর করতে না হয়।
এই আবিষ্কার প্রাণীজগতের সংজ্ঞাকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। জীবন এখন শুধুই শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর নির্ভর করে না, বরং একটি অভিযোজিত লড়াইয়ে বেঁচে থাকার কৌশল। সমগ্র প্রাণীকূলকে অবাক করে দেওয়া এই গবেষণাটি PNAS জার্নালে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।
একটি বন্ধ দরজা… আর ৪২ বছরের নিঃশব্দ মৃত্যু!
সময়টা ১৯৬৬ সাল, অক্টোবর মাস। জায়গাটা ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবের এক পুরনো ফ্ল্যাট। চারপাশ নিস্তব্ধ। বৃষ্টি পড়ছে টুপটাপ, জানালার কাঁচে ধাক্কা খাচ্ছে হাওয়া।
এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা রাখা একটি ছোট টেবিলে। কাঠের চেয়ারে বসা একজন নারী—Hedviga Golik।তার চোখ স্থির টেলিভিশনের দিকে—সাদা-কালো পর্দায় চলছে সেই যুগের কোনো অনুষ্ঠান।এই নারী একাই থাকতেন। কারো সঙ্গে মেলামেশা করতেন না, বন্ধু ছিল না বললেই চলে। এক সময় সরকারি অফিসে চাকরি করতেন। পছন্দ ছিল বই আর চা। প্রতিবেশীরা জানতেন, Hedviga ভীষণ একা থাকতেন, তবে ছিলেন যথেষ্ট আত্মনির্ভরশীল।তাঁর দরজা সচরাচর কেউ দেখত না খোলা।
মাঝেমধ্যে কেউ কেউ খোঁজ নিতেন, কিন্তু Hedviga ঠিক কবে নিখোঁজ হলেন, কেউ জানেই না।তারপর হঠাৎ... নিঃশব্দে সেই দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল।চিরতরের জন্য।দিন যায়, মাস যায়, বছর গড়ায়…ধীরে ধীরে প্রতিবেশীরা তাকে ভুলে যেতে থাকে। কেউ ভাবত হয়তো কোথাও চলে গেছেন, কেউ বলত হয়তো মারা গেছেন কোনো হাসপাতালে। Hedviga আর ফিরলেন না। তাঁর নামটাও হারিয়ে গেল সময়ের পাতায়…
…এবং ঠিক ৪২ বছর পর,
২০০৮ সালের এক শরতের বিকেল। সরকারি ফ্ল্যাট অফিসের একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি অ্যাপার্টমেন্টের তালা ভাঙলেন। উদ্দেশ্য—ফ্ল্যাটটি সংস্কার করে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া।কিন্তু তালা খুলতেই যা দেখলেন, তা যেন কোনো হরর সিনেমার দৃশ্য...ঘরের ভেতরে চেয়ারে বসা এক কঙ্কাল, হাতে এক কাপ মগ, চোখ টিভির দিকে।ঘরের ভেতরে এতটাই ধুলো—প্রমাণ করে দেয়, কেউ সেই ঘরে দশক ধরে পা রাখেনি।
তবে ঘরের সবকিছু সাজানো-গোছানো, ঠিক যেন কেউ কালকেই ব্যবহার করে গেছে!তদন্তে জানা গেল—এই কঙ্কাল ছিল সেই হারিয়ে যাওয়া নারী, Hedviga Golik-এর!প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে, সে ঘরে বসেই নিঃশব্দে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর… আর কেউ বুঝতেই পারেনি!কিন্তু প্রশ্ন হলো— কীভাবে একটা মানুষের মৃত্যু এভাবে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে?৪২ বছর ধরে কেউ টেরই পেল না?এই শহরের হাজার মানুষের মাঝে কীভাবে হারিয়ে গেল এক নারীর অস্তিত্ব?
এই গল্প শুধু এক নারীর নিঃসঙ্গ মৃত্যুর নয়, এটি সমাজের নিস্তরঙ্গ অন্ধকারেরও প্রতিচ্ছবি।আমরা কি সত্যিই জানি, পাশের ফ্ল্যাটে কে বেঁচে আছে… আর কে নেই?