২০১১ সালের ১১ মার্চ, একটি ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প এবং সুনামি জাপানে আঘাত হানে, যার ফলে ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই সঙ্কটকালে, প্রায় ৫০ জন প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান এবং বিজ্ঞানী—যারা “ফুকুশিমা ৫০” নামে পরিচিত— সেখানে স্বেচ্ছায় থেকে যান।
তারা সমুদ্রের পানি ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত রিয়্যাক্টরগুলো ঠান্ডা রাখেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করেন।
তারা অত্যধিক রেডিয়েশনের মুখে থেকেও, প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে দিনরাত পরিশ্রম করেন, যাতে আর বিস্ফোরণ না ঘটে এবং তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে না পড়ে।
এই সাহসী প্রচেষ্টা আরও বড় একটি পারমাণবিক বিপর্যয় রোধ করে, যা কোটি কোটি মানুষের জীবন এবং প্রকৃতিকে প্রভাবিত করতে পারত।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই এক বৃদ্ধ এগিয়ে এলেন আমার দিকে। তারপর শুরু হলো আমাদের কথোপকথন—
বৃদ্ধ: দিদিভাই, একটা ধূপ নাও না, দিদি আমার… আজ একটাও বিক্রি হয়নি!
(বলা বাহুল্য, কিছুক্ষণ ওনার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম। এই বয়সে একজন মানুষ এত কাঠফাটা রোদে কীভাবে দাঁড়িয়ে আছেন ভাবতেই মনটা কেমন হয়ে গেল। সম্বিৎ ফিরল আবার ওনার ডাকে)
বৃদ্ধ: ও দিদিভাই, নেবে??
আমি: হ্যাঁ, হ্যাঁ, দাও একটা। কত?
বৃদ্ধ: মাত্র ১২ টাকা, দিদি।
আমি: আচ্ছা বলো তো, এই রোদে দাঁড়িয়ে কষ্ট হয় না?
বৃদ্ধ: হয় তো, খুব কষ্ট হয়। গলা তুলে হাঁকও দিতে পারি না, দিদিভাই!
আমি: রোজ এখানেই বসো?
বৃদ্ধ: হ্যাঁ, দিদি, এখানেই।
আমি: বাড়ি কোথায়? কখন আসো?
বৃদ্ধ: বাড়ি তো বারাসাতে। ওই ৯টা ৪৪- এর দত্তপুকুর ট্রেনে নামি। ১০টার ভেতর এখানে চলে আসি।
আমি: ছেলে-মেয়ে নেই?
বৃদ্ধ: ছেলে নেই, দিদি। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে।
আমি: মেয়েরা দেখে না তোমায়?
বৃদ্ধ: ওদের থেকে কী আর চাইতে পারি… (বলেই মুখ নিচু করে নিলেন। বুঝলাম, মেয়েরা বৃদ্ধ মা-বাবাকে আর দেখেন না।)
আমি: বাড়িতে আর কে আছেন?
বৃদ্ধ: গিন্নি আছেন, অসুস্থ।
আমি: এতে চলে তোমার?
বৃদ্ধ: ওই চলে, দিদি। পুঁজি তো কম। এই যে তুমি নিলে একটা, দু-টাকা লাভ হলো। তুমি তো আমার লক্ষ্মী দিদি। কাজ না করলে চলবে বলো!
আমাদের করনীয় কি ?
জীবনের প্রতিটি মোড়ে এভাবেই দেখা হয়ে যায় এমন অসহায় মানুষদের সাথে। আমাদের অনেকেরই হয়তো তেমন প্রয়োজন নেই, তবুও একটা ছোট্ট জিনিস কিনে নেওয়া, বা কিছু কথা বলা, ওদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।
চলুন, না হয় প্রয়োজন না-ও থাকে, তবু রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এই মানুষগুলোর কাছ থেকে একটা কিছু কিনে নিই। আমাদের সামান্য সহযোগিতা হয়তো ওদের কাছে বিশাল আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে।
আপনি কি জানেন ওঝা সাপের বিষ নামাতে পারে? জেনে নিন কিভাবে!
গ্রামবাংলায় একটি ব্যাপক প্রচলিত ধারণা হলো,সাপে কাটলে ওঝা ঝাড়ফুঁক করে রোগীকে সুস্থ করতে পারে। অনেকেই বলে থাকেন, ওঝার ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে বিষ নামানো সম্ভব এবং এমন বহু উদাহরণও রয়েছে যেখানে ওঝার কাছে গিয়ে রোগী সুস্থ হয়ে ফিরেছে। ফলে গ্রামাঞ্চলে আজও অনেক মানুষ সাপে কাটার পর সরাসরি হাসপাতালে না গিয়ে প্রথমে ছুটে যান ওঝার কাছে।
তবে, কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে-যদি ওঝা সত্যিই কার্যকর না হতো, তাহলে এই বিশ্বাস এতটা ব্যাপক হলো কীভাবে?
প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং উত্তর হলো--হ্যাঁ, অনেক সময় ওঝার কাছে গিয়ে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা।
বাংলাদেশে প্রায় ৮০টি সাপের প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২৮টি সাপ বিষধর।
তবে বিষধর হোক বা নির্বিষ,সব সাপই আত্মরক্ষার জন্য কামড় দিতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সাপ চেনেন না, ফলে কেউ সাপে কাটলে তারা বুঝতে পারেন না সেটা বিষাক্ত নাকি নির্বিষ। তখন প্রচলিত বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তারা রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে যান।আর এখানেই মূল বিষয়টি ঘটে।
ধরুন, কেউ নির্বিষ সাপের কামড় খেয়েছে। সেক্ষেত্রে তার শরীরে কোনো বিষ প্রবেশ করেনি। তাই এমনিতেই কিছুক্ষণ পর সে সুস্থ হয়ে উঠবে, চেতনায় বা শারীরিক যন্ত্রনায় তেমন কিছু ঘটবে না। কিন্তু রোগী যেহেতু ওঝার কাছে গিয়েছিল, লোকজন ধরে নেয় “ওঝার ঝাড়ফুঁকেই সে ভালো হয়েছে”।
এবার আসা যাক আরেক প্রশ্নে—যদি বিষধর সাপে কামড় দেয়, তবুও কিছু মানুষ ওঝার কাছে গিয়ে সুস্থ হয় কেন?
এর উত্তর হলো—ড্রাই বাইট (Dry Bite)।
বিশেষ করে বিষধর সাপ, গোখরা (Naja naja)
এই সাপ অনেক সময় আত্মরক্ষার জন্য কামড় দিলেও বিষ প্রয়োগ করে না। এটা ‘ড্রাই বাইট’ নামে পরিচিত। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, গোখরা প্রায় ৬০%-৭০% কামড় হয় ড্রাই বাইট।
যে রোগী এমন ড্রাই বাইটে আক্রান্ত হয়, তার শরীরে বিষ ঢোকে না,ফলে সে স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ হয়ে ওঠে। আর সমাজ ধরে নেয় ওঝার ঝাড়ফুঁকের ফলেই সে ভালো হয়েছে।
সত্যি বলতে, ওঝার ঝাড়ফুঁক বা মন্ত্রতন্ত্রে সাপে কাটার বিষ নামানো সম্ভব নয়।
বিষাক্ত সাপে কামড় দিলে একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা হলো হাসপাতালে গিয়ে সঠিক চিকিৎসা (Anti-venom) নেওয়া।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্বিষ সাপের কামড়, বা বিষধর সাপের ড্রাই বাইট, ওঝার ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে “সুস্থ হওয়ার” ভ্রান্ত ধারণাকে বাড়িয়ে তোলে।
পরামর্শ:
সাপে কাটলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে যান। মনে রাখবেন, জীবন রক্ষা করতে বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাই একমাত্র উপায়।
চিন্তা করেছেন কি...? স্বাভাবিকভাবে মানুষের শরীরে যে পরিমাণ রক্তনালী রয়েছে তা দিয়ে প্রায় পুরো পৃথিবীকে তিনবার পেঁচানো সম্ভব,
আর এই জটিল রক্তনালীর জাল মাত্র এক দেড় দুই মিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ- অথচ কখনো এর জন্য কোন সমস্যায় পড়তে হয় না....
যদি এটি কোন রশি বা জালের সঙ্গে তুলনা করেন তাহলে হয়তো কয়েক হাজার মানুষের পুরো জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে সেই রশি বা জালের পেঁচগোজ বা গিট খুলতে-যেখানে একটি সাধারণ এয়ারফোন পর্যন্ত অস্বাভাবিকভাবে গিট লেগে যায় -
চিন্তাশীল মস্তিষ্কের ব্যক্তিরা এতটুকুতেই কি চিন্তা করে না..? যে জটিল, কঠিন, অস্বাভাবিক শৃঙ্খলা আচার্যজনকভাবে কিভাবে এমনি এমনি হতে পারে....?
তিনি ছিলেন বিশ্বের মঞ্চ কাঁপানো কিশোর কণ্ঠের বিস্ময়—জাস্টিন বিবার।
‘বেইবি’ গেয়ে পুরো পৃথিবীকে মাতিয়ে দেওয়া সেই ছেলেটিই আজ জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।
নাম, যশ, টাকা, খ্যাতি—সবই ছিল তার ঝুলিতে। এমনকি নেশার জিনিসে বোঝাই প্রাইভেট জেটে চড়ে ঘোরা ছিল তার রোজকার ব্যাপার। কিন্তু জীবন কীভাবে সবকিছুর জবাব দেয়, তার প্রমাণ আজকের বিবার।
আজকের দিনে তার কাঁধে রয়েছে ৩১.৫ মিলিয়ন ডলারের বিশাল ঋণ। একসময় যে হাত মাইক্রোফোন ধরত, আজ সে হাত ধরছে স্ত্রীর সাহায্যের জন্য। একসময় যে মানুষ লক্ষ কোটি ডলারের চেক স্বাক্ষর করতেন, আজ তাকিয়ে আছেন স্ত্রী হেইলির ‘রোড’ ব্র্যান্ড বিক্রির অর্থের দিকে। জীবন একেবারে বদলে গেছে।
কোনোদিন কি তিনি ভেবেছিলেন, এই দিনও আসবে? সেই যে হঠাৎ করে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকা অহঙ্কার, নেশা, অবিন্যস্ততা—সব মিলে একসময় নিজেরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন। তখন কেউ বুঝিয়ে বললেও হয়তো শোনার মতো সময় ছিল না, কারণ সাফল্যের শব্দে মানুষের নিজের অন্তরের সতর্ক সংকেতও ঢেকে যায়।
সেই বিবার আজ শারীরিকভাবে অসুস্থ, ক্যারিয়ার ধুঁকছে, কনসার্ট বাতিল হচ্ছে একের পর এক। অথচ একসময় তার কনসার্টের টিকিট পাওয়া মানে ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। যে মানুষ ২০০ মিলিয়ন ডলারে নিজের মিউজিক ক্যাটালগ বিক্রি করেন, তিনিই এখন তারই ট্যাক্স, আইনজীবী, ম্যানেজারের বিল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জীবনে উড়তে চাইলে আগে শিখতে হবে কিভাবে নামতে হয়। বিবার শিখতে পারেননি। তার ভুল ছিল—জীবনকে হিসাব ছাড়া চালানো। এখন শিখছেন। কিন্তু ততদিনে পেছনে ফেলে এসেছেন স্বাস্থ্য, শান্তি, আত্মসম্মান—সবকিছু। যেকোনো সাফল্যই যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা নিজের ধ্বংস ডেকে আনে।
এখানেই যদি শেষ হতো, তাহলে জীবন শুধুই ট্র্যাজেডি হয়ে থাকত। কিন্তু বিবারের জীবনে একটা শক্তি রয়ে গেছে—ভরসার আরেক নাম, তার স্ত্রী হেইলি। যিনি নিজের কসমেটিক ব্র্যান্ড বিক্রি করে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন, ঋণের বোঝা হালকা করতে সাহায্য করছেন। এটাও জীবন শেখায়—সত্যিকারের সম্পর্ক খারাপ সময়েই চিনতে হয়।
এই গল্প থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
• সাফল্য যদি হিসাব না জানে, তবে সে শত্রু।
• শরীর, সম্পর্ক আর অর্থ—এই তিনের সমতা না রাখলে জীবন গড়াতে পারে ধ্বংসের দিকে।
• প্রতিটি উঠানের পেছনে থাকে এক সম্ভাব্য পতনের গল্প। প্রস্তুত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
• এবং সবশেষে, পাশে দাঁড়ানো মানুষই হয় জীবনের আসল সম্পদ।
জাস্টিন বিবার আমাদের শিখিয়ে গেলেন—তারকা মানেই অমরত্ব নয়। সাফল্য মানেই স্থায়িত্ব নয়। কিন্তু ভুল থেকে ফিরে আসা, সেটাই জীবন। হয়তো এই অভিজ্ঞতা তাকে নতুনভাবে জন্ম দেবে—আর আমাদের দেবে আরও একটা শিক্ষা, আরও একবার ভাবার সুযোগ।
কারণ পতন কখনো শেষ নয়, যদি শেখা শুরু হয়।