"কুকুরের আয়ু কেন মানুষের আয়ুর চেয়ে কম?"
প্রশ্নটি বিস্ময়কর একটি ব্যখ্যা দিয়েছিলো মাত্র ৬ বছর বয়সী এক শিশু!
আমি একজন পশু-চিকিৎসক। কিছুদিন আগে, একটি আইরিশ উল্ফহাউন্ড প্রজাতির কুকুরের চিকিৎসা করছিলাম। কুকুরটির নাম বেল্কার, বয়স ১০ বছর। বেল্কার, তার মালিক রন, রনের স্ত্রী লিসা, ও তাঁদের শিশুপুত্র শেন, প্রত্যেকেরই খুব আদরের পোষা। এবং, অলৌকিকভাবে হলেও তাঁদের প্রিয় বেল্কারের আরোগ্য কামনা করছিলেন তাঁরা। বেল্কারের ব্যাধিটি চিকিৎসার আওতার বাইরে চলে গিয়েছিলো। ক্যান্সারে ভুগছিলো সে।
আমি দেখছিলাম, অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণা সইতে না-পেরে দুমড়েমুচড়ে কাতরাচ্ছে প্রাণীটা। রন ও লিসাকে প্রস্তাব দিলাম, অসহায় প্রাণীটির জন্য আমাদের যেহেতু আর কিছুই করার নেই, ওর যন্ত্রণা লাঘবে এখন ইউথানাশিয়া (ব্যথাহীন ঐচ্ছিক মৃত্যু কার্যকর)-ই উত্তম পদ্ধতি। তাঁরা রাজি হলেন।
যখন ইউথানাশিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, রন ও লিসা অনুরোধ করলেন তাঁদের পুত্র শেনকে যেন পুরো ব্যাপারটির সময় সাথে রাখা হয়, সব দেখতে দেওয়া হয়! তাঁদের ধারণা, প্রিয় প্রাণীটির ব্যথাবিহীন মৃত্যু কার্যকর দেখার অভিজ্ঞতাটি তাকে ওর বিষয়ে ভবিষ্যতে মনোবেদনা থেকে মুক্তি দেবে, জীবনের জন্মমৃত্যুর স্বাভাবিক নিয়ম মেনে নিতে সাহায্য করবে।
পরদিন, ইউথানাশিয়ার পূর্বমুহূর্তে, রনের পরিবার যখন বেল্কারকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখে শেষ বিদায় জানাচ্ছিলো গায়ে হাত বুলিয়ে, শেষ চুমুর আদরে, আমার চোখ ভরে উঠেছিলো অশ্রুতে। ওসময়, শেন ছিল খুবই শান্ত, এবং নিরন্তর হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলো তার আদরের বেল্কারের গায়ে। আমি ধরতে পারছিলাম না, সে বুঝতে পারছে কিনা কী হতে চলেছে! কয়েক মিনিটের মধ্যেই, চিরতরে ঘুমিয়ে গেলো বেল্কার, পরম প্রশান্তিতে।
মনে হলো, মাত্র ৬ বছরের শিশুটি, ওই মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবেই নিলো। তার চোখেমুখে কোনো বেদনা বা হাহাকার লক্ষ্য করলাম না আমি। একজন পেশাদার চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও, ওই মুহূর্তে আমার বুকের ভেতরটা বিষণ্ণ হয়ে উঠেছিলো, ছোট্ট শেনের জন্য। তাকে নিয়ে বাইরে বেরুলাম, একটি নির্জন স্থানে বসলাম দু'জনে, পাশাপাশি; এক বুড়ো আর এক শিশু। আলাপ আরম্ভ করলাম, মানুষের আয়ুর চেয়ে কেন কুকুরের আয়ু কম, এই নিয়ে। শেন, চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলো। এবং হঠাৎই, সে বলে উঠলো, "আমি জানি, কেন কম!"
চমকে উঠেছিলাম! অতঃপর, সে যা বললো, শুনে, আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! মাত্র দু'টি বাক্যের সেই অপূর্ব ব্যাখ্যাটির চেয়ে সুখময় কিছু আর কোনোদিন শুনবো বলে মনে হয় না এই জীবনে! শিশুটির সেই কথা দু'টি, চিরকালের জন্য, জীবন, আয়ু ও বেঁচে থাকা সম্পর্কে আমার ধারণা, সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দিলো।
শেন বলেছিলো, "জন্মের পরে, মানুষ অনেক... অনেক... অনেক দিন ধরে, শিখতে থাকে- সবসময় অন্যকে কিভাবে ভালোবাসবে, সবসময় অন্যের সাথে সুন্দর ব্যবহার কীভাবে করবে, অন্যকে কখনো কষ্ট না-দিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবে সবসময়, কীভাবে সবসময়েই অন্যের সাথেসাথে-পাশেপাশে থাকবে- এইসব; তাই না?" অতঃপর, বললো সে, "কুকুরেরা তো ছোট্ট থেকে ওইসব কিভাবে করতে হয় জানেই, সেজন্যই তাদেরকে আমাদের মতো এতো বেশি দিনের জীবন লাগে না।"
আমি, কেঁদেছিলাম সেইদিন, সারারাত। আমি জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছিলাম সেইদিন, একটি শিশুর মুখের দু'টি মাত্র বাক্যের ভিতরে। যে-জীবনের আরাধনা করতে শিখিনি আমরা কখনো।
একটি জীবন, ক্ষুদ্র একটি সাধারণ জীবন, আমাদের। কেন আমরা একে, অন্যের প্রতি উদার, অন্যের জন্য আন্তরিক, বিনয়ী, সাধাসিধাভাবে, যাপন করতে শিখলাম না!
#collected

Tanha Mim
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?