- কাল দুপুর আনুমানিক ২.৩০ হবে। রাস্তার পাশের কলকাতা চেনা দোকানে চা খাচ্ছি। একটি মেয়ে, বয়স ২৩ কি ২৪ হবে, ইতস্তত করতে করতে দোকানে ঢুকলো। হাতে একটা স্বচ্ছ ফাইল। ভিতরে কিছু মার্কশিট, সার্টিফিকেট এসব দেখা যাচ্ছে! সারা শরীরে প্রসাধনের বিন্দুমাত্র চিহ্ন না থাকলেও ঘাম আর রোদমাখা মুখটা বেশ মায়াময়। দোকানদারের সাথে মেয়েটার কিছু কথোপকথনের ছিটেফোঁটা….
মেয়ে- দাদা, এখানে ভাত বা রুটি কিছু পাওয়া যাবে?
দোকানী- হ্যাঁ, ভাত পাবেন, বলুন কি কি খাবেন? ডাল, ডিম, সব্জি, রুই মাছ, পাবদা মাছ, ব্রয়লার মুরগীর মাংস,পাঠার মাংস।
মেয়ে- এমনি শুধু ডাল আর ভাত কত দাদা?
দোকানী – ভাত, ডাল, সবজি ৩৫ টাকা।
মেয়ে – আমার সবজি চাই না, আমায় শুধু ভাত আর ডাল দিন!
৩০ টাকায় হয়ে যাবে তো?
দোকানী – আচ্ছা বসুন দিচ্ছি!
এরপর একটা ফোন আসে মেয়েটার মোবাইলে।
মেয়ে – ” হ্যাঁ মা বলো!
হ্যাঁ ! হ্যাঁ ব্যাংকে ইন্টারভিউ ভালো দিয়েছি! হ্যাঁ খেয়েছি। মাছ,সব্জী, ভাত। তুমি ওষুধগুলো খেয়েছ?….. হ্যাঁ আমি ৫ টার ট্রেনটা ধরবো… আচ্ছা ভাইকে টিউশান থেকে ফেরার সময় স্টেশনে দাঁড়াতে বলবে……আচ্ছা রাখো।”
ফোনটা রেখে কয়েকটা সেকেন্ড বাইরের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকলো….. হয়তো অসুস্থ মা.. স্কুল পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের সুদিন এনে দেওয়ার সাজানো দিনের ছবিগুলো চোখে ভিড় করছিলো…
দেখে কি রকম যেন একটা শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা ভাব চলে এলো… একটা অজানা অচেনা মেয়ের জন্য.. কি যেন বলে এই বয়সটাকে… বালিকার চেয়ে বড়.. যুবতীর চেয়ে ছোট।
নারী স্বাধীনতা কি- ওর কাছ থেকে একবার শুনতে খুব ইচ্ছে করছিলো, মনে মনে শুভকামনা জানালাম..
এই চাকরির আকালের যুগে হে বালিকা তুমি যে বাইরে এসে আগুন রোদের তলায়.. শক্ত মাটিতে নেমে এসেছ যুদ্ধের জন্য, এখানেই তুমি যুদ্ধটা অর্ধেক জিতেছো.. আর বাকী অর্ধেক নিজের চাকরির টাকায় সত্যি সত্যি মাছ ভাত খাওয়ার পর জিতবে…. এ পর্যন্ত ঘটনাটা হয়তো সাধারণ ছিলো.. যদিও “মেয়ে” তুমি মন জিতে নিলে..
কিন্তু ঘটনাটা আরও বাকী….
দোকানী ভাতের থালাটা সাজিয়ে মেয়েটির সামনে রেখে বললো,
দিদি আমি ভুল করে সব্জিটা দিয়ে ফেলেছি, আপনি খেয়ে নিন প্লিজ!!
ওই তিরিশ টাকাই দিয়েন।
মেয়ে -কিন্তু আমি তো শুধু ডালভাতই….
দোকানী – আমি একদম ভুলে সব্জিটা দিয়ে ফেলেছি.. আপনি প্লিজ খেয়ে নিন.. তিরিশ টাকাই নেবো আমি…আমার ভুল.. আপনি না খেলে এতোটা খাবার নষ্ট হবে আমার..
ওদের মতো আমিও ভেবেছিলাম নিছকই ভুল…
বিল দেয়ার সময় দোকানদার কে জিজ্ঞাসা করলাম, দাদা সত্যিই কি ভুল করে সব্জীটা দিয়েছেন?
দোকানদার কানের কাছে এসে বললো, “শুধু ব্যবসায় লাভ খুঁজলে হবে দাদা! এরকম ভুলগুলো করার সুযোগও খুঁজতে হবে ওর খুব খিদে পেয়েছে। দেশের বাড়িতে আমারও বোনটার বয়স এরকমই” বলে আবার নির্লিপ্ত মুখে চা, সিগারেট, ভাত, তরকারির রাজ্যে হারিয়ে যায়।
আমি খুঁজে পেলাম না, কার জন্য বেশী ভালো লাগা উচিৎ! মেয়েটা নাকি দোকানদার!!
হয়তো একটা কথা বলা যেতে পারে,
যে যুদ্ধ জিনিসটা বোঝে, সেই যোদ্ধার ঘাম, ক্ষুধার মূল্য দিতে জানে।
#collected
- কাল দুপুর আনুমানিক ২.৩০ হবে। রাস্তার পাশের কলকাতা চেনা দোকানে চা খাচ্ছি। একটি মেয়ে, বয়স ২৩ কি ২৪ হবে, ইতস্তত করতে করতে দোকানে ঢুকলো। হাতে একটা স্বচ্ছ ফাইল। ভিতরে কিছু মার্কশিট, সার্টিফিকেট এসব দেখা যাচ্ছে! সারা শরীরে প্রসাধনের বিন্দুমাত্র চিহ্ন না থাকলেও ঘাম আর রোদমাখা মুখটা বেশ মায়াময়। দোকানদারের সাথে মেয়েটার কিছু কথোপকথনের ছিটেফোঁটা….
মেয়ে- দাদা, এখানে ভাত বা রুটি কিছু পাওয়া যাবে?
দোকানী- হ্যাঁ, ভাত পাবেন, বলুন কি কি খাবেন? ডাল, ডিম, সব্জি, রুই মাছ, পাবদা মাছ, ব্রয়লার মুরগীর মাংস,পাঠার মাংস।
মেয়ে- এমনি শুধু ডাল আর ভাত কত দাদা?
দোকানী – ভাত, ডাল, সবজি ৩৫ টাকা।
মেয়ে – আমার সবজি চাই না, আমায় শুধু ভাত আর ডাল দিন!
৩০ টাকায় হয়ে যাবে তো?
দোকানী – আচ্ছা বসুন দিচ্ছি!
এরপর একটা ফোন আসে মেয়েটার মোবাইলে।
মেয়ে – ” হ্যাঁ মা বলো!
হ্যাঁ ! হ্যাঁ ব্যাংকে ইন্টারভিউ ভালো দিয়েছি! হ্যাঁ খেয়েছি। মাছ,সব্জী, ভাত। তুমি ওষুধগুলো খেয়েছ?….. হ্যাঁ আমি ৫ টার ট্রেনটা ধরবো… আচ্ছা ভাইকে টিউশান থেকে ফেরার সময় স্টেশনে দাঁড়াতে বলবে……আচ্ছা রাখো।”
ফোনটা রেখে কয়েকটা সেকেন্ড বাইরের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকলো….. হয়তো অসুস্থ মা.. স্কুল পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের সুদিন এনে দেওয়ার সাজানো দিনের ছবিগুলো চোখে ভিড় করছিলো…
দেখে কি রকম যেন একটা শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা ভাব চলে এলো… একটা অজানা অচেনা মেয়ের জন্য.. কি যেন বলে এই বয়সটাকে… বালিকার চেয়ে বড়.. যুবতীর চেয়ে ছোট।
নারী স্বাধীনতা কি- ওর কাছ থেকে একবার শুনতে খুব ইচ্ছে করছিলো, মনে মনে শুভকামনা জানালাম..
এই চাকরির আকালের যুগে হে বালিকা তুমি যে বাইরে এসে আগুন রোদের তলায়.. শক্ত মাটিতে নেমে এসেছ যুদ্ধের জন্য, এখানেই তুমি যুদ্ধটা অর্ধেক জিতেছো.. আর বাকী অর্ধেক নিজের চাকরির টাকায় সত্যি সত্যি মাছ ভাত খাওয়ার পর জিতবে…. এ পর্যন্ত ঘটনাটা হয়তো সাধারণ ছিলো.. যদিও “মেয়ে” তুমি মন জিতে নিলে..
কিন্তু ঘটনাটা আরও বাকী….
দোকানী ভাতের থালাটা সাজিয়ে মেয়েটির সামনে রেখে বললো,
দিদি আমি ভুল করে সব্জিটা দিয়ে ফেলেছি, আপনি খেয়ে নিন প্লিজ!!
ওই তিরিশ টাকাই দিয়েন।
মেয়ে -কিন্তু আমি তো শুধু ডালভাতই….
দোকানী – আমি একদম ভুলে সব্জিটা দিয়ে ফেলেছি.. আপনি প্লিজ খেয়ে নিন.. তিরিশ টাকাই নেবো আমি…আমার ভুল.. আপনি না খেলে এতোটা খাবার নষ্ট হবে আমার..
ওদের মতো আমিও ভেবেছিলাম নিছকই ভুল…
বিল দেয়ার সময় দোকানদার কে জিজ্ঞাসা করলাম, দাদা সত্যিই কি ভুল করে সব্জীটা দিয়েছেন?
দোকানদার কানের কাছে এসে বললো, “শুধু ব্যবসায় লাভ খুঁজলে হবে দাদা! এরকম ভুলগুলো করার সুযোগও খুঁজতে হবে ওর খুব খিদে পেয়েছে। দেশের বাড়িতে আমারও বোনটার বয়স এরকমই” বলে আবার নির্লিপ্ত মুখে চা, সিগারেট, ভাত, তরকারির রাজ্যে হারিয়ে যায়।
আমি খুঁজে পেলাম না, কার জন্য বেশী ভালো লাগা উচিৎ! মেয়েটা নাকি দোকানদার!!
হয়তো একটা কথা বলা যেতে পারে,
যে যুদ্ধ জিনিসটা বোঝে, সেই যোদ্ধার ঘাম, ক্ষুধার মূল্য দিতে জানে।
#collected
Sinthya Tasmim
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
sadia jesi
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Mayshi Farjana
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?