🚧 হর্সশু কাঁকড়া : পৃথিবীর সবচেয়ে দামী রক্তের প্রাণী...😲😲😲
🔸 হর্সশু কাঁকড়া আমাদের থেকেও বহু পুরনো প্রাণী। এমনকি এরা ডাইনোসরেরও আগে পৃথিবীতে এসেছে! সময়ের পরীক্ষায় টিকে থেকে এরা আজও বেঁচে আছে ও বিবর্তিত হয়েছে। অবাক করার মতো বিষয় হলো, এদের রক্ত নীল, এরা উল্টো হয়ে সাঁতার কাটতে পারে এবং তাদের শরীরে আছে প্রায় নয়টি চোখ।
🔸 ৪৫০ মিলিয়ন বছরের পুরনো প্রাণী:-
▪️ হর্সশু কাঁকড়ার উৎপত্তি প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে। অর্থাৎ, ডাইনোসরেরও প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর আগে তারা পৃথিবীতে এসেছে। এদের বলা হয় “লিভিং ফসিল” বা জীবন্ত জীবাশ্ম। গবেষকরা এদের পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন অর্ডোভিসিয়ান যুগের শেষ দিকে, যখন পৃথিবীতে প্রথম প্রাচীন মাছ দেখা দিয়েছিল।
🔸 হর্সশু কাঁকড়া আসলে কাঁকড়া নয়:-
▪️ হর্সশু কাঁকড়া হলো সামুদ্রিক আর্থ্রোপড। এদের খোলস ঘোড়ার খুরের মতো দেখতে, তাই এ নামকরণ। তবে নামের মধ্যে “কাঁকড়া” থাকলেও এরা আসল কাঁকড়া নয়। এরা বরং মাকড়সা ও বিচ্ছুর মতো আরাকনিড গোষ্ঠীর কাছাকাছি।
বিশ্বে হর্সশু কাঁকড়ার মাত্র চারটি প্রজাতি আছে। এদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মেক্সিকো উপসাগর এবং আমেরিকার উপকূলে পাওয়া যায়। ফিলিপাইনে কেবল পালাওয়ান দ্বীপেই এদের দেখা মেলে।
🔸 দেখতে ভিনগ্রহের মতো হলেও শান্ত স্বভাবের এদের লম্বা কাঁটা-ওয়ালা লেজ দেখে অনেকে ভয় পান। কিন্তু আসলে এরা খুবই শান্ত প্রাণী। লেজ তারা ব্যবহার করে শুধু সাঁতারের সময় দিক বদলাতে বা ঢেউয়ে উল্টে গেলে আবার সোজা হতে। তাই লেজ ধরে কখনোই এদের ধরা উচিত নয়, এতে প্রাণীটি আহত হয়।
🔸 নীল রক্তের রহস্য:-
▪️ আমাদের রক্ত লোহায় ভরপুর হিমোগ্লোবিনের জন্য লাল হয়। হর্সশু কাঁকড়ার রক্ত নীল, কারণ এতে থাকে তামাযুক্ত হিমোসায়ানিন। এ প্রোটিন শরীর জুড়ে অক্সিজেন বহন করে।
▪️ তাদের রক্তে থাকে আমিবোসাইট নামের বিশেষ কোষ, যা রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। হর্সশু কাঁকড়ার কোনো পূর্ণাঙ্গ রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। যখনই শরীরে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস প্রবেশ করে, তখন এই কোষগুলো ফেটে গিয়ে আক্রমণকারী জীবাণুর চারপাশে জেলি জাতীয় আবরণ তৈরি করে এবং প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়।
▪️ এই কোষগুলি এতটাই সংবেদনশীল যে ই. কোলাই (E. Coli) ধরনের জীবাণুকেও সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করতে পারে। তাই এদের রক্ত থেকে তৈরি করা হয় LAL (Limulus Amebocyte Lysate), যা চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করতে এবং ভ্যাকসিন ও ওষুধ পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়।
এক লিটার হর্সশু কাঁকড়ার রক্তের দাম প্রায় ১৫,০০০ ডলার বা তার বেশি। এজন্যই এ রক্ত পৃথিবীর অন্যতম দামী তরল পদার্থ।
🔸 নয়টি চোখ:-
▪️ হর্সশু কাঁকড়ার শরীরে মোট নয়টি চোখ থাকে। এদের খোলসের উপর দু’টি বড় যৌগিক চোখ আছে, যা সঙ্গী খুঁজতে সাহায্য করে। উপরিভাগে আরও পাঁচটি চোখ থাকে, যেগুলো সূর্যালোক ও অতিবেগুনি আলো শনাক্ত করতে পারে। নিচের দিকে দু’টি চোখ থাকে, যা সাঁতারের সময় তাদের দিক নির্ধারণে সাহায্য করে। এমনকি লেজের উপরও আলোক সংবেদী অঙ্গ আছে, যা তাদের মস্তিষ্ককে দিন-রাতের ছন্দের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
🔸 উল্টো হয়ে সাঁতার কাটে কেন?
▪️ হর্সশু কাঁকড়া সাধারণত উল্টো হয়ে সাঁতার কাটে। এভাবে তারা অন্য প্রাণীদের থেকে দূরে থাকতে পারে এবং শিকারি প্রাণী এড়াতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে অল্পবয়সি হর্সশু কাঁকড়াদের এভাবে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্করা সাধারণত গভীর সমুদ্রতলে খাদ্য খুঁজে বেড়ায়।
🔸 প্রজনন ও জীবনচক্র:-
▪️ মেয়ে হর্সশু কাঁকড়া আকারে বড় হয়। চাঁদের পূর্ণিমা রাতে বা উষ্ণ মৌসুমে এরা কাদামাটি বা বালুকাবেলায় ডিম পাড়ে। একটি মেয়ে প্রায় ৬০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ ডিম পাড়তে পারে। ডিমের বড় অংশই পাখি, মাছ ও সরীসৃপের খাদ্য হয়। কেবল কয়েকটি ডিম থেকেই বাচ্চা ফোটে, যারা প্রথমে জোয়ার-ভাটার তটে থাকে, পরে গভীর সমুদ্রে চলে যায় এবং ৮-১০ বছরে পূর্ণবয়স্ক হয়।
🔸 মানুষের কারণে বিপন্ন:-
▪️ প্রায় অর্ধেক বিলিয়ন বছর ধরে টিকে থাকলেও হর্সশু কাঁকড়া এখন বড় বিপদের মুখে। চিকিৎসা শিল্পে রক্ত সংগ্রহ, অতিরিক্ত শিকার, উপকূল ধ্বংস এবং খাবারের জন্য ব্যবহার তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলছে। একসময় এদের সার ও পশুখাদ্য বানাতো মানুষ। বর্তমানে চিকিৎসা শিল্পেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়।
▪️ তবে বিজ্ঞানীরা বিকল্প পথ খুঁজছেন—যাতে এই অসাধারণ প্রাণীগুলোকে রক্ষা করা যায়। বহু দশক ধরে মানুষ এদের কাছে ঋণী, কারণ এদের নীল রক্ত আমাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করছে।