সালমান শাহ আমাকে ‘গুন্ডি’ বলে ডাকত: চিত্রনায়িকা নূতন
***********************************************************************
সালমান শাহর সঙ্গে চিত্রনায়িকা নূতনের দারুণ সখ্য ছিল। সালমান শাহ অনেকবারই তাঁর সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার অনুরোধ করেছিলেন নূতনকে। কিন্তু সেই সময় শুটিংসহ নানা ব্যস্ততায় হলে গিয়ে তাঁর সিনেমা দেখা হয়নি নূতনের। ১০ ফেব্রুয়ারি সালমান শাহের তুমি আমার সিনেমাটি বরিশালের অভিরুচি সিনেমা হলে নতুন করে মুক্তি পেয়েছে। খবরটি জানার পর সালমানকে স্মরণ করে গতকাল ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন অভিনেত্রী।
ফেসবুক পোস্টে নূতন লিখেছেন, ‘সালমানের কোনো ছবি কখনো হলে গিয়ে দেখা হয়নি। সেই সময় আমি ব্যাক টু ব্যাক ছবি করি। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ হয়নি। তবে সালমান চলে যাওয়ার পরে আফসোস লেগেছে, অনেক বলার পরেও সালমানের সঙ্গে হলে গিয়ে ছবি দেখতে পারিনি। বেশির ভাগ ছবিই জহির রায়হান কালার ল্যাব বা এফডিসিতে দেখা হয়েছে। আর এক–দুইটা ছবি সালমান নিজে ভিসিআরে দেখিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে নূতন বলেন, ‘সালমান নতুন ছবি মুক্তি পেলেই প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখতে বলত। আমি বলতাম, তুমি যে জনপ্রিয়, সঙ্গে আমি গেলে দর্শক আর সিনেমা দেখবে না। আমাদের নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়বে। দর্শক তোমাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাবে। এসব বলতাম আর মজা করতাম। এত দিন পর খুব আফসোস হয়, কেন তখন হলে সালমানের ছবি দেখতে গেলাম না। সালমান মাত্র ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেছে। শুরু থেকেই সে যে পরিমাণ দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছে, জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, ভাবা যায় না। খেয়াল করে দেখেছি, তাকে পেলে তরুণ–তরুণী যেভাবে ঘিরে ধরত, অটোগ্রাফ নিত—বেচারা ভক্তদের চাপে কাহিল হয়ে যেত। সময়ের বিরতিতে সিনেমায় একজন করেই তারকা আসে। আমাদের একজন রাজ্জাক ছিলেন, আরেকজন সালমান শাহ।’
নূতন জানান, কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির ‘ও আমার বন্ধু গো’ গানটিতে সালমানকে দেখে রাজ্জাকের কথা মনে পড়েছিল তাঁর, ‘সালমানের ওই গানটি দেখে “নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তা চলেছি একা” গানটিতে রাজ্জাকের ড্রেস, অঙ্গভঙ্গির কথা মনে হয়েছিল। তখনই আমার মনে হয়েছিল, ইন্ডাস্ট্রি আরেকজন রাজ্জাক পেতে চলেছে।’
নূতনের ভাষায়, সালমান অমায়িক মানুষ ছিল। পোশাকে দারুণ স্টাইলিস্ট ছিল। সেটা সিনেমার পর্দায় বা বাস্তবেও দেখা যেত সালমানকে।
সম্পর্ক দুষ্টুমির হলেও নূতনকে খুব সম্মান করতেন সালমান। সিনেমার শুটিংয়ে কোনো দৃশ্যে কোন পোশাক পরবেন, অনেক সময় সালমান তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন। নূতন বলেন, ‘আমি তখন কক্সবাজারে ছবির শুটিংয়ে। কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিরও শুটিং ওই এলাকায়। আমি জানতাম না। শুটিংয়ের ফাঁকে, চেয়ারে বসে আছি, হঠাৎ দেখি একটা খোলা জিপে সালমান ও মৌসুমি লোকেশন পরিবর্তন করে যাচ্ছে। আমাকে দেখেই গাড়ি থামিয়ে কাছে এল সালমান। আমি উঠে চেয়ার ছেড়ে দিলাম। সে কী আর বসতে চায়। জোরাজুরি করে বসালাম। সিনেমায় আসার আগেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। প্রথম যখন কাজ শুরু করল, আমার কাছে পোশাক নিয়ে পরামর্শ নিয়েছিল। এর পরেও অনেক ছবির ক্ষেত্রে এটা করেছে।’
সালমানের মধ্যে একটা শিশুর মন ছিল। মানুষের সঙ্গে সে মজা করত। নূতন বলেন, ‘আমার ও সঙ্গে খুব মজা করত। আমি বয়সের ওর কত বড় ছিলাম। কিন্তু ওর বাচ্চাসুলভ মনটার কারণে সব মেনে নিতাম। আমিও দুষ্টুমি করতাম ওর সঙ্গে। প্রথম ছবি মুক্তির আগে ওকে বলেছিলাম, ছবি হিট হলে তো আর পাত্তা দিবা না।’ লজ্জা পেয়ে বলেছিল, ‘না না, কখনই সেটা হবে না। দেখে নিয়ো তুমি।’ আমি সেই সময় পায়ে পেনসিল হিল, প্যান্ট, জামা পরতাম। মাঝেমধ্যে টি-শার্টও পরতাম। আমাকে নাকি গুন্ডা গুন্ডা লাগত তাঁর কাছে। সালমান আমাকে “গুন্ডি” বলে ডাকত। এফডিসিতে দেখা হলেই গুন্ডি বলে জোরে ডাক দিত।’
স্ট্যাটাসের আরেকাংশে তিনি লিখেছেন, ‘অনেক বছর পরে ছবি মুক্তির খবরটি দেখে বুকটা কেঁপে উঠল। মনে হচ্ছিল, রিলিজের আগে যেমন বলত, আমার ছবি দেখবে কিন্তু। এখনো তাই বলবে। খুব জোরে সাউন্ড দিয়ে গান বাজিয়ে আমার বাসার সামনে চকলেট নিয়ে দাঁড়াবে।’
প্রথম আলোকে নূতন আরও বলেন, ‘ওর কথা মনে হলে মনটা ভেঙে যায়। কী সুন্দর একটা ছেলে, কী সুন্দর অভিনয়; যা দিয়ে রাতারাতি দর্শকের মন জয় করে ফেলেছিল। বাচ্চাদের মতো পকেটে চকলেট রাখত। এফডিসি বা বাসায়—সেখানেই দেখা হোক, পকেট থেকে বের করে তা আমাকে দেবেই।’
এখন নূতনের খুব ইচ্ছা হলে গিয়ে সালমানের সিনেমা দেখার। ঢাকায় সালমানের ছবি মুক্তির অনুরোধ করে এই অভিনেত্রী স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন, ‘এখন খুব ইচ্ছা সালমানের ছবি হলে গিয়ে দেখার। এই ছবিটা বরিশালের পাশাপাশি ঢাকায় মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি দেওয়া হোক। মন ভরে চোখ মেলে সালমানকে হলে দেখতে চাই। দৃশ্যের পরে দৃশ্যে হাততালি দিতে চাই। যদিও আমার চোখ লাল করে পানি আসবে, তা–ও শেষ পর্যন্ত দেখব।’
সালমানের উদ্দেশে এই নায়িকা আরও বলেন, ‘সালমান, তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন ছিল, আমি তোমার কী ছিলাম, তা না–ই বা বললাম। শুধু এতটুকু বলি, হাজার মানুষের মতো আমিও তোমার একজন ভক্ত, ভালোবাসি তোমায়।’
Source:. প্রথম আলো