লন্ডন থেকে স্কটল্যান্ডগামী একটি বিমানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তির অস্থির আচরণ এবং মুসলিম সেজে আতঙ্ক সৃষ্টি করার ঘটনায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার সকালে লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে গ্লাসগো অভিমুখী ইজি-জেট ফ্লাইটের এই ঘটনার পরপরই পুলিশের হাতে আটক হন ৪১ বছর বয়সী অভয় নায়েক।
অভয় নায়েক, যিনি বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরের বাসিন্দা, বিমানে হঠাৎ করে চিৎকার করে বলছিলেন, “আমেরিকার মৃত্যু হোক,” “ট্রাম্পের মৃত্যু হোক,” এবং “আল্লাহু আকবার।” তার এমন উক্তি এবং আচরণে বিমানের সহযাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, এমনকি অনেকেই সন্দেহ করেছিলেন যে এটি কোনও আত্মঘাতী হামলা কিংবা জঙ্গি তৎপরতা হতে পারে।
গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর, বিমানের পাইলট জরুরি অবতরণ করেন এবং অভয় নায়েককে পুলিশে সোপর্দ করেন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে এবং স্কটল্যান্ড পুলিশ তা পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে, অভয়ের বিরুদ্ধে “Air Navigation Order” এর আওতায় বিমান চলাচলের নিরাপত্তা বিপন্ন করার এবং সহযাত্রীদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে, আদালতে হাজির হলেও তিনি কোনো দোষ স্বীকার করেননি এবং তাকে পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত রিমান্ডে রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা এই ঘটনার মাধ্যমে ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মুসলিম নিপীড়নের বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করেছেন। তাদের মতে, অভয়ের আচরণ শুধু একটি বিচ্ছিন্ন মানসিক রোগীর ঘটনা নয়, বরং এটি ভারতীয় সমাজে চলমান উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং মুসলিম বিদ্বেষের এক প্রতিফলন হতে পারে। ভারতের সাম্প্রতিক মুসলিম বিরোধী রাজনীতি, যেমন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, গোহত্যার গুজবে গণপিটুনির ঘটনা, এবং অন্যান্য সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলে এই বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মেদির মুসলমানদের দিকে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি তো নতুন কিছু নয়। তাই অনেকেই ধারণা করছেন এটি মুসলমানদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখে মুসলমানদের খারাপ বানাতে মোদি নিজেই সাজিয়েছেন সেই ভারতীয় হিন্দু ব্যক্তিকে দিয়ে।
এই ঘটনা আবারও একটি বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে—বিশ্বব্যাপী উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় বিদ্বেষের বিষক্রিয়া কেবল নিজ দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রতিফলিত হচ্ছে ভারতীয় কট্টর ইসলাম বিদ্বেষীদের দ্বারা। অভয়ের আচরণ হয়তো একক ঘটনা হিসেবে দেখা হতে পারে, কিন্তু এর মধ্যে যে আদর্শিক বিপন্নতা রয়েছে, তা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা উচিত নয়।
