অসংখ্য আজিজ ও বেনজীর আপনারা তৈরি করেছেন: সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল
***********************************************************************
শুধু একজন আজিজ বা একজন বেনজীর নয়, আওয়ামী লীগ অসংখ্য আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘যারা লুট করে খাচ্ছে। এই দায় এই সরকারের।’
আজ বুধবার বিকেলে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
দেশকে এমন ‘দুরবস্থায়’ নিয়ে আসার জন্য সরকারকে দায়ী করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আপনারা কোন অবস্থায় বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছেন যে সাবেক পুলিশপ্রধান ও তাঁর হাজার হাজার দুর্নীতির চিত্র পত্রপত্রিকায় বেরিয়ে আসছে আজ। তাঁকে আপনারা লালন করেছেন। স্যাংশন (যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা) দেওয়ার পরও তাঁকে আপনারা আইজি বানিয়েছেন।’
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের নাম উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ একইভাবে সাবেক সেনাপ্রধানকে স্যাংশন (যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা) দেওয়া হয়েছে, একটা মাত্র কারণে, সে বাংলাদেশে লুট করেছে, চুরি করেছে এবং নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দায় কি শুধু ওদের? এই দায় এই সরকারের, যারা আজ জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন।’ তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমি বারবার বলছি যে আপনাদের (সরকার) রিজাইন (পদত্যাগ) করা উচিত এই কারণে। দুর্নীতি করেছে কি শুধু তাঁরা। অসংখ্য আজিজ ও বেনজীর আপনারা তৈরি করেছেন, যারা লুট করে খাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমাদের মা কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে গিয়ে বলতেন—ছেলে ঘুমাল, পাড়া জুড়াল বর্গি এল দেশে। বর্গি কারা? বর্গি সেই সব লুটেরা, যারা বর্মা থেকে আসত, এসে লুট করে সব নিয়ে চলে যেত। এটাকে তখন বাংলাদেশের মানুষ ভয় পেত। আজ তারা (আওয়ামী লীগ) বর্গিতে পরিণত হয়েছে। তাদের একমাত্র কাজ বাংলাদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে সেখানে সম্পদ গড়ে তোলা।’
ঝিনাইদহের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে তথাকথিত বিনা ভোটে ইলেকটেড (নির্বাচিত) এমপি, আমি তাঁকে এমপিও বলতে চাই না… আমরা যে বাজারে মাংস কিনতে যাই, গোশত কিনতে যাই, টুকরা টুকরা করে দেয় না?… সেই টুকরা টুকরা করে কেটে নাকি ফেলে দিয়েছে। কী অবস্থা।’
গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনকে জোরদার করতে সবাইকে জেগে ওঠার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এখন জেগে ওঠার সময় এসেছে। আমি একটা কথাই বলতে চাই, আজ যে আমাদের সংকট, এই সংকট মহাসংকট। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।
জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিহিত করে তাঁর যুগান্তকারী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
দলের স্থায়ী কমিটিরে সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই আওয়ামী লীগকে লাইসেন্স দিল রাজনীতি করার। আর সেই লাইসেন্স নিয়ে আজ মেলা কথা বলছে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে, বেগম খালেদা জিয়া সর্ম্পকে, তারেক রহমানের সম্পর্কে। তারা ভেবেছিল জিয়াউর রহমানকে হত্যা করলে বিএনপি আর থাকবে না। কিন্তু বিএনপি আছে।
সভাপতির বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আজ আওয়ামী লীগ (ক্ষমতায়) এসে মুক্তিযুদ্ধের সব চেতনা, স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। আজ এই দেশ চোরের দেশ। এই জন্যই কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম? তখন সবাই সমস্বরে জবাব দেন ‘না’।
মেজর (অব.) হাফিজ আরও বলেন, আজ সংসদ সদস্য কারা হন। বিনা ভোটে যাঁরা এমপি হন, যাঁদের টুকরা টুকরা করে কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ করে দেওয়া হয়। বিশ্ববাসী এই বাংলাদেশকে এখন চিনছে। কোথায় গেল সেই একাত্তরের গৌরবের বাংলাদেশ।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রমুখ।
source : প্রথম আলো।